জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বিগত ৮ বছর ধরে ফ্রি-তে সেহরি এবং ইফতার করাচ্ছেন রফিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম।
তিনি এখন জেলার মানবতার ফেরিওয়ালা উপাধীতে ভুষিত হয়েছেন। প্রতিদিন এক থেকে দেড়শো রোজাদার ব্যক্তি এখানে সেহরি এবং ইফতার করেন। বেশি টাকার মালিক না হলেও সারা বছর যা আয় করেন সেখান থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করে রমজান মাস জুড়ে তিনি সেহরি ও ইফতার করান। বছরের এগারো মাস ব্যবসা করলেও রমজানের এক মাস মেহমানদারি করেন তিনি।
রাত ৩টার দিকে রফিক হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, সেহরি খাওয়ার ভিড় চোখে পড়ার মত আক্কেলপুরের কলেজ বাজারের কাঁচা মালপট্টিতে রফিকের হোটেলে। ভেতরে ঢুকে দেখা গেল সবাই হাতে হাতে প্লেট নিয়ে যে যার মত করে টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছেন। তখন মালিকসহ বয়রাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। খালি নেই কারও হাত। হোটেল জুড়ে চলছে জমজমাট সেহরি পর্ব। আবার খাবার খেয়ে টাকা না দিয়েই চলে যাচ্ছেন সবাই। টাকা না দিয়ে সেহরি খাবেন সবাই এটাই রোজার একমাস ধরে রফিক হোটেলের নিয়ম। এই নিয়মটি তিনি গত আট বছর থেকে ধরে রেখেছেন।
হোটেলটি তেমন একটা বড় নয়। মালিকও তেমন অবস্থাশালী নয়। তিনি বছরের এগারো মাস হোটেলের খাবার বিক্রি করেন। এই আয় দিয়ে তিনি পুরো বছর সংসার চালান, এখান থেকে আয়ের কিছু টাকা সেহরি ও ইফতার খাবারের জন্য টাকা জমা করেন। প্রতি বছর রোজার শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি রোজাদারদের টাকা ছাড়াই সেহরি ও ইফতারি খাওয়ান। প্রতিদিন সেহরিতে ১ শত ২০ এবং ইফতারে দেড়শ রোজাদার ব্যাক্তিদের সেহরি ও ইফতারি করান রফিক।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হোটেল মালিকের নাম রফিকুল ইসলাম রফিক। তিনি ভাড়া নিয়ে হোটেল ব্যবসা করেন। আক্কেলপুর পৌরশহরেই তার বসবাস। তার হোটেলের নামও রফিক হোটেল। কলেজ হাটে আসা সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী, ব্যবসায়ীরা, হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে আসা স্বজনরা এই হোটেলে টাকা ছাড়াই নিয়মিত সেহরি ও ইফতারি খাচ্ছেন। হোটেল মালিক রফিকুল নিজে এবং তার হোটেলের কর্মচারীররা মিলে ইফতারি ও সেহরির খাবার পরিবেশন করেন। সেহরির খাবারে ছিল গরুর মাংস, মাছ, ভাজি, ডাল এবং এক গ্লাস দুধ দিয়ে সমাপ্ত হয় সেহরি পর্ব। আর ইফতারিতে থাকে মাংসের বিরিয়ানী, ছোলা বুট, বুন্দা, মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনি সাথে একগ্লাস শরবত । রোজাদারেরা তৃপ্তি সহকারে সেহরি ও ইফতার করছেন। হোটেলের অভ্যন্তর ছাড়িয়ে বাহিরে হাটের জায়গায় ডেকোরেটরের কাপড় বিছিয়ে ইফতার করানো হয়।
সেহরি খেতে আসা একজন বলেন রোগী নিয়ে এসে সেহরি খেতে হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হয়। আর রমজান মাসে সেহরি খাওয়া নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম, রফিক আমাদের বিপদের বন্ধু। সেহরি খেয়ে টাকা দিতে চাইলেও সে কোনো টাকা নেয় না। সকলকে ফ্রি-তে ইফতার এবং সেহরি খাওয়ানোই তার ইচ্ছা।
পার্শ্ববর্তী নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলাহাট এলাকার বাসিন্দা রিফাত হোসেন শাওন বলেন, হাসপাতালে রুগি নিয়ে এসেছি। রাতে সেহরি খাওয়ার জন্য হোটেল খুঁজতে এসে এই হোটেলে আসি। এখানে অনেক ভালো মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। খাবার পরে বিল দিতে এসে জানতে পারলাম তিনি টাকা না নিয়ে সেহরি খাওয়ান। তার এই কার্যক্রমে আমাদের মতো অনেক বিপদগ্রস্ত লোকের উপকার হয়।
হোটেল মালিক রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, রমজান মাসে খাবারের হোটেলগুলো বন্ধ থাকে। এতে ইফতারি ও সেহরির সময় রোজাদারদের অনেক কষ্ট হয়। বছরের এগারো মাস আমি হোটেল ব্যবসা করি। যা আয় হয় তার থেকে কিছু টাকা জমিয়ে রেখে রমজান মাসে সকল রোজাদারদের ইফতার করানোর চেষ্টা করি। ২০১৬ সাল থেকে এই কার্যক্রম শুরু করেছি। এ কাজে আমার হোটেলের কর্মচারীরা সহযোগীতা করে। তারাও এই মাসে কোনো পারিশ্রমিক নেয় না। মূলত পরকালের মুক্তি এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই আমি এই কাজ করি। আমি যতদিন বাঁচবো এটা যেন চালু রাখতে পারি এজন্য আপনার দোয়া করবেন।
মানবতার ফেরিওয়ালা জয়পুরহাট জেলার মধ্যে রফিক হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম তার হোটেলে আট বছর ধরে টাকা ছাড়াই সেহরি ও ইফতার করিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এর মাধ্যমে বাহির এলাকা থেকে আগত রোজাদাররা অনেক উপকৃত হন। এটি একটি মহৎ কাজ। রফিক গরিব হলেও তার মন অনেক বড়। এরকম বিত্তশালীরা যদি এগিয়ে আসত অনেক ক্ষুধার্ত মানুষেরা ইফতার ও সেহরি খেয়ে রোজা রাখতে পারত।