সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজের ওপর নজর রাখছে ভারতীয় নৌবাহিনী। দেশটির নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার এ তথ্য জানিয়েছেন। রোববার (২৪ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নৌপ্রধান বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ছিনতাই করা হয়েছে এবং এটিকে সোমালিয়ায় নেওয়া হয়েছে। আমরা এটির ওপর সতর্ক নজর রাখছি।
তিনি বলেন, জলদস্যুরা ছিনতাই করা এ জাহাজটিকে নিজেদের জন্য ব্যবহার করবে নাকি এটিকে মাদার ভেসেল হিসেবে ব্যবহার করা হবে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। এছাড়া সোমালিয়ার জলসীমায় চলাচল করা জাহাজগুলোর ওপরও আরও ঘণিষ্ঠ নজর করা হচ্ছে।
অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার বলেন, ভারতীয় নৌবাহিনী ভারত মহাসাগরকে আরও সুরক্ষিত ও নিরাপদ করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে। তিনি এ সময় গত ১০০ দিনে নৌবাহিনীর নেওয়া জলদস্যুরাবিরোধী এবং অন্যান্য সামুদ্রিক নিরাপত্তা অভিযানের তথ্য তুলে ধরেন।
এনডিটিভি জানিয়েছে, সামুদ্রিক নিরাপত্তা অভিযানের অংশ হিসেবে ভারতীয় নৌবাহিনী জলদস্যুতা বিরোধী, ক্ষেপণাস্ত্র বিরোধী এবং ড্রোন বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে।
নৌবাহিনীর তথ্যানুসারে, অপারেশন সংকল্পের অধীনে পরিচালিত এসব অভিযানে ১১০ জনের প্রাণ রক্ষা করা হয়েছে। রক্ষা পাওয়া এসব লোকদের মধ্যে ৪৫ জন ভারতীয় এবং বাকি ৬৫ জন বিদেশি নাগরিক।
এর আগে আলজাজিরা জানায়, সাগরে জাহাজ ছিনতাইয়ের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি আটক ৩৫ সোমালি জলদস্যুকে ভারতের মুম্বাই বন্দরে আনা হয়েছে। ভারতীয় নৌবাহিনী কর্তৃক একটি বাণিজ্যিক জাহাজ উদ্ধারের কয়েক দিন পর তাদের ভারতে আনা হলো।
এক বিবৃতিতে ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্বদানকারী যুদ্ধজাহাজ আইএনএস কলকাতা শনিবার ভোরে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে নোঙর করেছে।
উল্লেখ্য আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী এ জাহাজ। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) উপকূল থেকে ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে থাকা কয়লাবাহী জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালীয় জলদস্যুরা। কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি নৌপথে পণ্য পরিবহন করে। জাহাজটিতে মোট জন ২৩ নাবিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১১ জন চট্টগ্রামের বাসিন্দা। বাকিরা নোয়াখালী, ফেনী, ফরিদপুর, খুলনা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, নানা প্রক্রিয়া শেষ করে সব নাবিকসহ জাহাজটিকে মুক্ত করতে বেশ সময় লাগতে পারে। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি সমঝোতাই মুক্তির মূল উপায়।
সাবেক মেরিনার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ জিয়াউল হক গণমাধ্যমকে জানান, সব প্রক্রিয়া শেষ করে নাবিকদের ছাড়া পেতে ১ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কেননা, মুক্তিপণ দাবির পর তা নিয়ে দরকষাকষিসহ অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে।