বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে পৌঁছাতে জোর চেষ্টা-তদবির চালাচ্ছেন ভারতীয় আমেরিকানরা। তারা বাংলাদেশের ওপর পদক্ষেপ নিতে ট্রাম্প প্রশাসন ও মার্কিন কংগ্রেসকে কাজে লাগাতে চাইছেন।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) সংবাদ সংস্থা পিটিআইর বরাতে এ খবর জানিয়েছে এনডিটিভি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ভারতীয় আমেরিকানদের যে যোগাযোগের চেষ্টা তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভরত বড়াই নামে একজন চিকিৎসক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় কমিউনিটির একজন প্রভাবশালী নেতা।
চলতি মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে এখন সরকার গঠন করছে ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবে তার সরকার।
প্রতিবেদন মতে, ভরত বড়াই জানিয়েছেন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পোস্ট দিয়েছিলেন সেটা থেকে অনুপ্রাণীতি হয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন তারা।
ওই চিকিৎসক বলেছেন, তার জোর বিশ্বাস, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেওয়ার পর হিন্দুদের ওপর নিপীড়নের বিষয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন ট্রাম্প।
পিটিআইকে এক সাক্ষাৎকারে ভরত বড়াই বলেছেন,
বাংলাদেশে হিন্দু ও তাদের মন্দিরে হামলার ব্যাপারে ট্রাম্প সাহসী বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি একজন সাহসী ব্যক্তি। যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কথা ভাবতে পারেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে ট্রাম্প সরকারের কাছে পৌঁছাতে ভারতীয় আমেরিকানরা সক্রিয় রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা চালানো হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এই ভারতীয় আমেরিকান।
ভরত বড়াই বলেছেন, ‘যদি তাদের (বাংলাদেশিদের) তৈরি পোশাক রফতানি বন্ধ হয়ে যায়, যা তাদের ব্যবসার ৮০ শতাংশ। তাহলে বাংলাদেশের মানুষ কী খাবে?’
তার দাবি, বাংলাদেশের ওপর এ ধরনের চাপ হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলা কথিত নির্যাতন বন্ধে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আমরা হিন্দু আমেরিকানরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কংগ্রেসের প্রতিও আহ্বান জানাব।’
এছাড়া হিন্দুদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের ওপর ভারতেরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ভরত বড়াই। তিনি বলেছেন, ‘যদি তারা হিন্দু ও সংখ্যালঘুদের হয়রানি অব্যাহত রাখে, তাহলে ভারতেরও তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া উচিত।’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শেখ হাসিনার পলায়নের পর বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন ঘটছে বলে অপপ্রচার শুরু হয় যা এখনও অব্যাহতভাবে চলছে।
এই অপপ্রচারে প্রভাবিত হতে দেখা যায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে গত ৩১ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন,
বাংলাদেশ এখন পুরোপুরিভাবে বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। দেশটিতে হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর দলবদ্ধভাবে হামলা ও লুটপাট চালানো হচ্ছে। আমি তাদের ওপর এই বর্বরোচিত সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
ওই পোস্টে তিনি আরও দাবি করেন, ‘আমার সময়ে এমনটা কখনো হয়নি। বিশ্বজুড়ে ও যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দুদের উপেক্ষা করে আসছেন কমলা ও জো বাইডেন। ইসরাইল থেকে ইউক্রেন এবং সেখান থেকে আমাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত পর্যন্ত এলাকার জন্য তারা বিপর্যয় নিয়ে এসেছেন। সেখানে আমরা আবার যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী করবো এবং সেই শক্তি দিয়ে আবার শান্তি ফিরিয়ে আনব!