Thursday, November 21, 2024

একই স্কুলের শিক্ষক বাবা-মা ও মেয়ে, একজন থাকলে আরেকজন ‘আসেন না’

আরও পড়ুন

অবশেষে সেই প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিলেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস স্বাক্ষরিত একটি শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটুয়াখালীর মহিপুর থানাধীন ১২৮ নম্বর চরধুলাসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষার নামে ‘তামাশা’। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদে প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস, তার স্ত্রী সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা ও তাদের মেয়ে সহকারী শিক্ষিকা সাওদার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এরপর নড়েচড়ে বসেন শিক্ষা কর্মকর্তা। স্কুল পরিদর্শন করে শোকজ করেন ওই শিক্ষককে।

অভিযোগ রয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৫ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এভাবে চলে আসছে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম। স্থানীয়রা বলছেন, ‘বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের অশোভন আচরণ, অনুপস্থিতি, অব্যবস্থাপনার কারণে এমন পরিস্থিতি। ম্যানেজিং কমিটি কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। মনগড়া ও নিজেদের খেয়ালখুশিমতো চালছে পাঠদান।’

গত রবিবার (২৭ অক্টোবর) সরেজমিনে বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৯টায় সরকারি নিয়মানুসারে প্রাথমিকের পাঠদান চলার কথা থাকলেও এসব নিয়মনীতির কোনও তোয়াক্কা না করে নিজস্ব নিয়মে চলছে বিদ্যালয়টি। ১০টার দিকে ক্লাসে আসেন সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর। সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা তিনিও ১০টার কিছু পরে আসেন। সাড়ে ১০টার দিকে বিদ্যালয় প্রবেশ করেন প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস। ওই সময় বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকক্ষ ছিল শিক্ষার্থীশূন্য। সাংবাদিক দেখে তড়িঘড়ি করে অফিসকক্ষে ঢুকে বিগত কয়েকদিনের স্বাক্ষর একসঙ্গে করেন সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর ও আকলিমা। তবে হাজিরাখাতায় গত কয়েকদিন প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতি দেখা গেছে। আরেক সহকারী শিক্ষিকা সাওদা রয়েছেন ছুটিতে। তবে ছুটির কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি বাবা প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস।

আরও পড়ুনঃ  মুসলিমদের আক্রমণ করে বক্তব্য, তোপের মুখে মোদি

সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর বিদ্যালয়ের নিচ থেকে কয়েকজনকে ডেকে ‘শিক্ষার্থী সাজিয়ে’ প্রথম শ্রেণির কক্ষে ঢুকিয়ে বেঞ্চে এনে বসান। তখনও বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে অপর কক্ষগুলো শিক্ষার্থীশূন্য। সোজা কথায়, বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের বিপরীতে উপস্থিত ছিল ৩ জন শিক্ষার্থী। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট উপস্থিত ছিল ১১ জন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ঠিকমতো আসেন না। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কোনও ক্লাস না নেওয়ায় গত ৭-৮ বছর ধরে স্কুলটি একবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। শিক্ষকরা অনিয়মিত হওয়ার কারণে বিদ্যালয়টিতে কমতে থাকে শিক্ষার্থীসংখ্যা। অভিযোগ রয়েছে একই পরিবারের প্রধান শিক্ষকসহ তিন জন থাকায় তারা পালাবদল করে ক্লাস নিচ্ছেন। বাবা আসলে মেয়ে আসেন না, মা আসলে বাবা আসেন না—এ যেন চোর পুলিশের খেলা চলছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। যার ফলে এখানে শিশুদের দিলে তাদের লেখাপড়ার কোনও উন্নতি হয় না, তাই বাধ্য হয়ে তাদের অন্যত্র নিয়ে যেতে হয় এমন অহরহ অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ  মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা রেখেই ঢাবির ভর্তি কার্যক্রম

সজীব তালুকদারসহ স্থানীয় একাধিক অভিভাবক বলেন, ‘সব অনিয়মের অবসানের মাধ্যমে ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় সুন্দর ও স্বাভাবিক পাঠদানের মধ্য দিয়ে আবারও মুখরিত হয়ে উঠুক, আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করি।’

অভিভাবক সদস্য মোহাম্মদ সুফিয়ান তালুকদার আক্ষেপ করে বলেন, ‘শিক্ষকরা ঠিকমতো ক্লাসে আসেন না, ৯টার সময় আসার কথা থাকলেও তারা কখনও ১০টায়, কখনও ১১টায় আসেন। তারা ঠিকমতো ক্লাস নেন না। আমরা চাই প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে চলুক।’

আরও পড়ুনঃ  আমাদের মান-ইজ্জতে হামলা হয়েছে, সাবধান হয়ে যাও

সহকারী শিক্ষিকা আকলিমা বেগম তাদের অনিয়মের কথা স্বীকার করে প্রতিবেদককে নিউজ না করার অনুরোধ জানান।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক আল আমিন বিশ্বাস বলেন, ‘আমি, আমার স্ত্রী, ও মেয়ে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও কখনও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটাইনি। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণে গত দুই দিন স্কুলে আসিনি।’ তবে ছুটি না নিয়ে অনিয়মের দায় স্বীকার করেন তিনি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস শোকজের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলার কারণে চরধুলাসার সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। নোটিশের জবাবের পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ