Thursday, November 21, 2024

মধ্যপ্রাচ্যে বাজছে যুদ্ধের ঘণ্টা: তেহরানের প্রস্তুতি, তেল আবিবের হুঙ্কার

আরও পড়ুন

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলছে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ। পরবর্তীতে ইসরায়েলের ব্যাপক আগ্রাসনে হামাসকে সাহায্যের জন্য যুদ্ধে জড়ায় লেবানন ও ইরান। এর প্রেক্ষিতে ইসরায়েলে ইরান ও তাদের সমর্থনপুষ্ট লেবাননের গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ বেশ কয়েকবার রকেট হামলা চালায়। পাল্টা হামলা চালায় ইসরায়েলও। এতে হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন ব্যক্তি নিহত হন।

এর জেরে অক্টোবরের ১ তারিখে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৮১টি ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে ইরান। এরপর ইসরায়েলও পাল্টা হামলার হুমকি দিয়ে আসছে। আর ইসরায়েলের এই সম্ভাব্য হামলা নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে তেহরান।

ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ‘থাড’ মোতায়েন
ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনার মার্কিন নথি ফাঁস
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের হামলার পরই মধ্যপ্রাচ্যে পুরোপুরি যুদ্ধের ঘণ্টা বাজবে। এ যুদ্ধ থামাতে এখনই বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। সেটা না হলে বিশ্ব চরম হুমকির মধ্যে পড়বে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চার ইরানি কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানায়, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি দেশটির সশস্ত্র বাহিনীকে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলা প্রতিরোধ ও পাল্টা আক্রমণের জন্য পরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

১ অক্টোবর ইসরায়েলের উদ্দেশে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র-বিরোধী সিস্টেম থেকে গুলি করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

এই চার কর্মকর্তার মধ্যে দুজন দেশটির চৌকস বাহিনী বিপ্লবী গার্ডের সদস্য। তারা আরও জানান, ইসরায়েল যদি ইরানের তেল ও পারমাণবিক স্থাপনার মতো স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে কিংবা দেশটির শীর্ষ নেতাদের ওপর হামলা চালায় তবে তেহরান আরও কঠোর হবে। আর এতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  বিক্রি হলো আম্বানির মেয়ের বাড়ি, কিনলেন কে?

গণমাধ্যমটি জানায়, পাল্টা হামলায় ইরান এক হাজার পর্যন্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে এবং এ হামলা আগের হামলা থেকে আরও বেশি শক্তিশালী হবে।

এছাড়াও পারস্য সাগর এবং হরমুজ প্রণালি দিয়ে তেল সরবরাহ এবং পরিবহনে বাধা দিয়ে বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হবে।

তবে ইসরায়েল প্রথম থেকেই বলে আসছে ইরানের তেলের অবকাঠামো বা পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাবে। যদিও এমন সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে তাদের মিত্র দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেল আবিবকে এ ধরণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানায়।

ওয়াশিংটন জানায়, ইসরায়েল যদি এমন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে তবে তার ফলাফল খুবই ভয়াবহ হবে। এতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যাবে এবং বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।

এদিকে ইরানের নেতারা প্রকাশ্যে বলেন যে তারা এ যুদ্ধ বাড়াতে আগ্রহী নন। যার প্রেক্ষিতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি গত সপ্তাহে এর রেশ থামাতে মধ্যপ্রাচ্যেসহ বেশকিছু দেশ সফর করেছেন। সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান, ইরাক, মিসর ও তুরস্ক সফরে দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ সংঘাত বন্ধ করার আহ্বান জানান।

এর মধ্যে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘থাড’ (THAAD) ইসরায়েলে মোতায়েন করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম ফার্স্ট পোস্ট এ খবর জানায়।

আরও পড়ুনঃ  গলফ কার্টে বসে ওমরাহ করার ব্যবস্থা করল সৌদি

ওই খবরে বলা হয়, ১ অক্টোবর ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি, বিমান বাহিনীর ঘাঁটি এবং দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর ভবন লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। এতে করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর ঘাঁটির ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয় বলে ইসরায়েল স্বীকার করে।

এ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে এবং সে হামলার জবাবে ইরানের ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হাত থেকে রক্ষা করতে এ ‘থাড’ সরবরাহ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

https://imaginary.barta24.com/resize?width=700&quality=100&type=webp&path=uploads/news/2024/Oct/25/1729863386684.jpg
ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস’র প্রধান হোসেইন সালামি। ছবি: সংগৃহীত
কিন্তু ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস’র প্রধান হোসেইন সালামি বৃহস্পতিবার সতর্ক করে ইসরায়েলের উদ্দেশে এক বার্তায় জানান, সম্প্রতি ইসরায়েলে একটি উন্নত মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এসব কিছু দিয়েও তেহরানের ভবিষ্যতের আক্রমণগুলো ঠেকানো যাবে না।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস সালামিকে উদ্ধৃত করে জানায়, “অপারেশন ট্রু প্রমিস ২-এর (১ অক্টোবরের হামলা) সময় তীর-বিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা যেমন কাজ করেনি, তেমনি থাড সিস্টেমও কাজ করবে না।”

ইসরায়েলকে হুমকি দিয়ে সালামি বলেন, “আপনি (ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু) এই সংঘাতে জিততে পারবেন না, আমরা আপনাকে ধ্বংস করব।”

এদিকে ইরানের সাম্প্রতিক নজিরবিহীন ড্রোন হামলার প্রতিশোধ হিসেবে দেশটিতে ইসরায়েলের সম্ভাব্য আক্রমণের পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন কিছু গোয়েন্দা নথি ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত তিনটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  সাড়ে তিন ঘণ্টার ফলে মোদির জোটের চেয়ে ৬২ আসনে পিছিয়ে রাহুল গান্ধীরা

এই নথি ফাঁসের ফলে ইসরায়েলকে কৌশল পরিবর্তন করতে এবং তার পরিকল্পনা বিলম্বিত করতে বাধ্য করা হয়েছে এমন খবরের মধ্যে আর্মি রেডিও বৃহস্পতিবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানায়, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যাতে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: সংগৃহীত
ওই কর্মকর্তা জানান, “পেন্টাগন থেকে নথি ফাঁস এবং ইরানের উপর হামলার জন্য সময় বেছে নেওয়ার মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।”

যদিও বেশকিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে ইসরায়েল কবে, কখন, কীভাবে পাল্টা হামলা চালাবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।

তবে কান পাবলিক ব্রডকাস্টার বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানায়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী প্রতিশোধের জন্য সবধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এখন শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে সংকেত পেলেই হামলা চালানো হবে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী’র (আইডিএফ) চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হ্যালেভি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এই পরিকল্পনাগুলো নিশ্চিত করে বলেছেন তেহরানে এখনই আক্রমণ শুরু করার উপযুক্ত সময় আসেনি।

এমন পরিস্থিতিতে এখন কেবল তেল আবিবের পরবর্তী কার্যক্রমের দিকেই নজর দিতে হবে। সব ছাপিয়ে যদি ইসরায়েল তাদের পদক্ষেপের বাস্তব প্রতিফলন ঘটায় তাহলে মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিশ্বব্যাপী নতুন এক ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে যাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না!

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ