গোপালগঞ্জে সেনা সদস্যদের ওপর হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মাহবুব আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক জি এম শাহাবুদ্দীন আজমসহ ১০৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৩২শ জন অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হয়েছে। গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিছুর রহমান এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে ১০ বেঙ্গল রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাকসুদুল আলম বাদি হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে ১০ আগস্ট বিকেল ৫ টায় ঢাকা-খুলান মহাসড়ক অবরোধ করে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে স্থানীয় আ.লীগের নেতা কর্মী ও সমর্থকরা। এ সময় তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে সড়কের দুই পাশে অসংখ্য গাড়ি আটকা পরে।
খবর পেয়ে গোপালগঞ্জে কর্তব্যরত সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে মহাসড়ক ছেড়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে বলে। এতে আন্দোলনকারীরা সেনা সদস্যদের সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়ায়। এ সময় সেনা বাহিনী সদস্যদের উপর হামলা করে।
এতে সেনাবাহিনীর ৪ কর্মকর্তাসহ ৯ জন আহত হয়। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর দুইটি অস্ত্র (রাইফেল), ছয়টি ম্যাগাজিন ছিনিয়ে নিয়ে একটি গাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় ও দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে উল্লাস করতে থাকে আন্দোলনকারীরা। ওই দিন বিকেল একটি অস্ত্র ও পরের দিন অপর অস্ত্রসহ তিনটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্ত শুরু হয়েছে, এখনো কোন আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
উল্লেখ, ১০ আগস্ট গোপালগঞ্জ ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দায়িত্ব পালনরত সেনাবাহিনীর ২টি টহল দল ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা সেনা টহল দলের ওপর ইট পাটকেল ছুঁড়ে মারে এবং দেশীয় তৈরি অস্ত্র দিয়ে টহল দলের সদস্যদের আঘাত করে। এ ঘটনায় আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সামি উদ দৌলা চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এতে বলা হয়, বিক্ষোভকারীদের হামলায় ৩ জন অফিসার, ১ জন জুনিয়র কমিশন অফিসার ও ৫ জন সেনাসদস্য আহত হয়। হামলাকারীরা সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সেনা টহল দল ৪ রাউন্ড অ্যামোনিশন ফায়ার করে। পরিস্থিতির তীব্রতা পরিলক্ষিত হওয়ায় ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আহত সেনা সদস্যরা আশঙ্কামুক্ত ও চিকিৎসাধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন আইএসপিআর।