বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড লেমিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশে চলা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তুলতে তার প্রতি আহ্বান জানায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘জাস্টিস ফর বাংলাদেশ’।
চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দেখতে চায়। দুই দেশের জনগণের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং দুই দেশই কমনওয়েলথ মূল্যবোধ বহন করে। আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং বিচারের জন্য সবচেয়ে কার্যকর সংস্থা হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
এতে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশ দুই দেশই আইসিসির সদস্য হওয়ায় সংস্থাটির মাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগী কর্তাব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। সুতরাং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য এই উদ্যোগ নেবে বলে আশা করে জাস্টিস ফর বাংলাদেশ।
এদিকে ‘জাস্টিস ফর বাংলাদেশ’ সংগঠনটির তিন সমন্বয়ক আইনজীবী ব্যারিস্টার মাইকেল পোলাক, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক প্রধান আব্বাস ফয়েজ এবং ব্রডকাস্টার ও বাংলাদেশ বিষয়ক রাজনীতি বিশ্লেষক আতাউল্যাহ ফারুক জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর গণহত্যা হয়েছে। যার যথেষ্ট প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে পাওয়ার আগ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন, এমন প্রমাণ রয়েছে। তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এই মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী হতে পারেন। এ ছাড়া শেখ হাসিনা শাসনামলে ৬০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি গুমের শিকার হন।
সংগঠনটি বলেছে, বাংলাদেশের তৎকালীন সরকার গোপন আটক ও নির্যাতনের অস্তিত্ব নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা বলেছে। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি গোপন টর্চার সেলের অস্তিত্ব নিশ্চিত হওয়া গেছে। যেখান থেকে গত ৬ আগস্ট অনেকে ফিরে এসেছেন অনেকে। গোপন টর্চার সেলে ভুক্তভোগীদের ওপর চালানো নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা পাওয়া গেছে। তারা এখন বেআইনি অপহরণ, জোরপূর্বক গুম এবং নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সম্পর্কে প্রমাণ সরবরাহ করতে পারবেন।
গত ১২ আগস্ট ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির কথা উল্লেখ করেছে জাস্টিস ফর বাংলাদেশ’। ওই ভিডিওটিতে দেখা গেছে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের সামনে ইকবাল নামের একজন পুলিশ কর্মকর্তা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মোবাইল ফোন থেকে একটি ভিডিও দেখাচ্ছেন।
সেখানে তিনি বলছেন, ‘গুলি করে করে লাশ নামানো লাগছে স্যার। গুলি করলে মরে একটা কিংবা আহত হয় একটা। একটাই যায় স্যার, বাকিডি যায় না। এইটা হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের এবং দুশ্চিন্তার বিষয়।’