আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে নেতাকর্মীদের ছাত্র-জনতার ওপর লেলিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (৪ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আন্দোলন দমন ও ভয়ভীতি দেখাতে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। দেশব্যাপী যে গণজাগরণ তৈরি হয়েছে তা হতা, দমন ও নিপীড়ন চালিয়ে ব্যর্থ করা যাবে না। সরকার সংঘাত উস্কে দিয়ে আন্দোলনকে নস্যাত করতে চায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আন্দোলনে ছাত্র ও জনগণকে হত্যার বিচার দেশের মাটিতেই হবে। তাদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিবৃতিতে তিনি বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।
আরও পড়ুনঃ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অগ্নিগর্ভ দেশ, নিহত ৮০
দেশব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায়ে ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অগ্নিগর্ভ দেশ। কর্মসূচি ঘিরে বিভিন্ন স্থানে হামলা-অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনা ও গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনকারী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ৮০ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকায় ৪, হবিগঞ্জে ২, সিলেটে ২, ভোলায় ১, জয়পুরহাটে ১, বরিশালে ১, রংপুরে ৪, কিশোরগঞ্জে ৩, বগুড়ায় ৪, কুমিল্লায় ২, শেরপুরে ৩, সিরাজগঞ্জে ৬, নরসিংদীতে ৬, ফেনীতে ৫, মুন্সিগঞ্জে ৪, পাবনায় ৩, মাগুরায় ৩ ও লক্ষ্মীপুরে ১০ জন, এনায়েতপুরে ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
আন্দোলনের সমর্থনে ফেনীতে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এই হামলায় অন্তত ৮জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নিহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- ফেনী সরকারি কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ, সদর উপজেলার ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে ছাইদুল ইসলাম এবং পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে শিহাব উদ্দিন। ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া এ হামালায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ছাড়াও পথচারী ও সাংবাদিকসহ ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর দেড়টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
মুন্সিগঞ্জ:
মুন্সিগঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারী-আওয়ামী লীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, রোববার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মুন্সিগঞ্জের সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাদের বাধা দিতে যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধলে দফায় দফায় বিস্ফোরণ হয় কয়েকটি ককটেল। একই সময় আগুন দেয়া হয় কয়েকটি মোটরসাইকেলেও। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে এলে ত্রিমুখী সংঘর্ষ ঘটে। এতে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া সংঘর্ষে আরও দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।
পাবনায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের টাউন হল সংলগ্ন এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল থেকেই পাবনা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। বেলা ১১টার দিকে শহরের টাউন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্র-জনতা। পরে টাউন হল এলাকায় ঘণ্টাখানেক ধরে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। এর মধ্যে সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে গোলাগুলি শুরু হলে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৩ জন নিহত হয়।
রংপুরে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। রোববার (৪ আগস্ট) নগরীর সিটি করপোরেশন এলাকায় সংঘর্ষ বাধলে প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নগরীর গুরাতিপাড়ার যুবলীগ কর্মী খসরু, মাসুম ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধন রায়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী।
মাগুরায় পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ জানায়, বেলা ১১টার দিকে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ওই সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ধাওয়া ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় নিহত হন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদেী হাসান রাব্বী।
বগুড়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ চারজন নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ৯০ জন গুলিবিদ্ধ।
নিহতদের মধ্যে তিনজনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- জেলার কাহালু উপজেলার বীরকেদার এলাকার শামছুল হকের ছেলে কলেজছাত্র মনিরুল ইসলাম (২২), বগুড়ার গাবতলী উপজেলার গোড়দহ এলাকার মৃত মোনা সরদারের ছেলে জিল্লুর রহমান (৪৫) ও দিনাজপুরের হিলির আনিছুর রহমানের ছেলে সেলিম (৪৫)। নিহত কলেজছাত্র মনিরুল ইসলাম নওগাঁর বদলগাছী বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের অর্থনীতি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। অপর দিকে সেলিম পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি বগুড়া শহরের হরিগাড়ি এলাকায় বসবাস করতেন।
কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন। নিহত আব্দুর রাজ্জাক রুবেল দেবিদ্বার উপজেলার বাড়েরা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে। তবে নিহত অন্যজনের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি। রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের নিউমার্কেট এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকায় ১ জন, কিশোরগঞ্জে ৩ জন, সিলেটে ১ জন, ভোলায় ১ জন, জয়পুরহাটে ১ জন, বরিশালে ১ জন ও লক্ষীপুরে ১ জন করে নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।