দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আজ সারাদেশে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। ঈদে সবার মধ্যে আনন্দ থাকলেও ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। জীবিকার তাগিদে নীরবে বসে ‘টাকার মেশিন’ পাহারা দিচ্ছেন তারা।
কথা বলে জানা গেছে, এটিএম বুথের নিরাপত্তায় যারা কাজ করছেন তাদের কেউ কেউ অনেক বছর ধরে এ কাজে নিয়োজিত আছেন। এই কাজে থেকে আনন্দ-উৎসবে সামিল হওয়ার সুযোগ না থাকলেও রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা হয়। তাই মন খারাপ হলেও দায়িত্বে অবহেলা করেন না তারা।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ঢাকা পোস্ট।
রাজধানীর মনিপুরী পাড়ায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলম (বামে)। তার সঙ্গে কথা বলছেন ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক হাসনাত নাঈম/
ফকিরাপুলের ডিআইটি এভিনিউ রোডের সাউথইস্ট ব্যাংকের একটি বুথের সামনে বসে ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ মনির। জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ১০ বছর ধরে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করছি। এই ১০ বছরে ২০টি ঈদ আমি শুধু টাকার মেশিন পাহারা দিয়ে কাটিয়েছি। অফিসাররা তো সবকিছু বন্ধ করে বাড়ি চলে যান কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ নেই।
মোহাম্মদ মনির বলেন, বাড়িতে মেয়ে-স্ত্রীসহ আরও কয়েকজন আছেন। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তাদের সঙ্গে আর ঈদ করতে পারিনি। ঈদের ১০-১৫ দিন পরে ছুটি হয়, তখন গিয়ে তাদের সঙ্গে সময় কাটাই। আসলে তাদের ভালো রাখার জন্যই তো আমাদের এই কষ্ট। এটা আমরা হাসিমুখে মেনে নিই।
ফার্মগেটের মনিপুরী পাড়ায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের একটি এটিএম বুথে দায়িত্ব পালন করছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই চাকরিতে যোগ দেওয়ার বয়স আমার ৮ বছর। এর মধ্যে মাত্র দুইটা ঈদ বাড়িতে কাটাতে পেরেছি। আসলে আমরা তো পাহারা দেওয়ার কাজটা করি। তাই ছুটি হোক বা না হোক, উৎসব আসুক বা না আসুক আমরা পাহারাটা দেওয়ার চেষ্টাই করি। এতে আমাদের কষ্ট হলেও সেটা মনে করি না।
রাজধানীর মনিপুরী পাড়ায় ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী নাসির উদ্দিন/ ঢাকা পোস্ট
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের একটি বুথের নিরাপত্তা কর্মী নাসির উদ্দিন বলেন, টাকা মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস। এজন্য এটিএম বুথ ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। বুথে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়াই আমাদের কাজ। বেতন অল্প টাকা হলেও আমাদের ডিউটি করতে হয় ১২ ঘণ্টার মতো। তারপরও বেতন-বোনাস পেয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাতে পেরেছি এটাই শান্তির। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে না পেরে মন খারাপ হয়, তবে দায়িত্ব পালনে তো অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ এই দায়িত্ব যে আমার রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা করে দেয়।
ঢাকা শহরে অলিতে-গলিতে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের অসংখ্য এটিএম বুথ। এসব বুথে একজন করে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। ঈদ আনন্দ বিসর্জন দিয়ে তারা টাকার মেশিন পাহারার দায়িত্ব পালন করছেন রুজি-রোজগারের জন্য। মূলত তৃতীয় পক্ষের হয়ে তারা এ দায়িত্ব পালন করেন। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সরাসরি তাদের ছুটির বিষয়টি দেখতে পারে না।