সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও এখনই চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে কবে যাবেন, তা-ও কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না। এর আগে দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সবকিছু ঠিক থাকলে আজ শুক্রবার তিনি চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে অন্য কোনো দেশের উন্নত সেন্টারে যাবেন লিভার প্রতিস্থাপনে। তবে রাজনৈতিক কারণে আপাতত তাঁর বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না– বলছে সূত্র।
এদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বিএনপির পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও চিঠি দেওয়া হয়। এ প্রক্রিয়ায় মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এবং সঙ্গে চিকিৎসক-নার্সসহ আত্মীয়স্বজন যারা যাবেন, তাদের ভিসা প্রক্রিয়াও শেষ হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে তাতে বিলম্ব ঘটছে। কী কারণে দেরি হচ্ছে, তা স্পষ্ট করতে নারাজ খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে সিসিইউতে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাঁকে দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ‘ম্যাডামের বিদেশযাত্রা দেরি হবে। আগামী সপ্তাহে হতে পারে কিংবা আরও পরে হতে পারে। বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর বাইরে কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি আগের চেয়ে সুস্থ আছেন; বাসায় চিকিৎসা চলবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গুলশানের বাসায় তাঁর সঙ্গে ছোট পুত্রবধূ রয়েছেন। এবার ম্যাডাম ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের একসঙ্গে হজ পালন করার কথা রয়েছে। সেটি বিদেশ যাওয়ার সময়ও হতে পারে, আবার দেশে ফেরার পথেও হতে পারে।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. মামুন বলেন, ‘ম্যাডামের লন্ডনের ভিসা আজ (বৃহস্পতিবার) হাতে পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা প্রক্রিয়াধীন। আমরা পৃথিবীর সেরা চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য দুই দেশের ভিসা একসঙ্গে নিচ্ছি। পরিস্থিতি বলে দেবে, আমাদের কী করতে হবে। উন্নত চিকিৎসায় প্রয়োজনে লন্ডন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ও জার্মানিতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। সব মিলিয়ে তাঁর বিদেশে যেতে একটু সময় লাগছে।’
ওই চিকিৎসক আরও বলেন, তিনি এখন বিমানে ভ্রমণ করতে পারবেন। ভ্রমণ করার মতো সুস্থ আছেন। আমরা ছয়জন চিকিৎসক সঙ্গে যাচ্ছি। সব মিলিয়ে হয়তো ১৬ জনের মতো সফরসঙ্গী থাকতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একজন নেতা বলেন, তিনি বিদেশ যেতে প্রস্তুত। যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন। তবে রাজনৈতিক কারণে যেতে বিলম্ব হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। লন্ডন থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, এখন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। রাজনৈতিক অবস্থাও স্থিতিশীল বলা যায় না। এ মুহূর্তে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা দেশে না থাকা একটু ঝুঁকি তো বটেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমকালকে বলেন, ঢাকা থেকে খালেদা জিয়া প্রথমে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে পরে তাঁকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কিংবা জার্মানির কোনো মাল্টিডিসিপ্লিনারি হেলথ সেন্টারে নেওয়া হতে পারে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপিপ্রধানের।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন তিনি। তখন থেকে সেখানেই আছেন।
এর পর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল বিগত সরকার। সাময়িক মুক্তির পর তাঁকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাঁকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও বারবার তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বিশেষ ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন। এভারকেয়ার হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসাধীন থেকে সর্বশেষ ২১ আগস্ট গুলশানের বাসায় ফেরেন তিনি।
বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে খালেদা জিয়ার।