জাকাত ইসলামের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম একটি। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের ওপর। এই কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা, জাকাত আদায় করা, হজ পালন ও রমজান মাসে রোজা রাখা।’
জাকাত আদায়কে পবিত্র কোরআনে ‘মুমিন বান্দার সাফল্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘অবশ্যই মুমিনরা সফল, যারা নামাজে বিনম্র থাকে, অনর্থক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকে, যারা জাকাত আদায় করে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান সংযত রাখে (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ১-৫)।’
পবিত্র কোরআনে জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সালাত আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করো। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর কাছে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা করো, আল্লাহ তা দেখছেন। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১১০) এ ছাড়াও জাকাতের ফজিলত ও গুরুত্ববিষয়ক অসংখ্য আয়াত ও হাদিস রয়েছে। তাই আমাদের মধ্যে যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তাদের যথাসময়ে তা আদায় করা অবশ্য কর্তব্য।
জাকাত না দিলে দুনিয়ায় বড় ক্ষতি ও আখেরাতে মহাশাস্তির কথা ইসলামে রয়েছে। বর্তমান সময়ে ব্যাংকের বিভিন্ন খাত রয়েছে, তার ওপর জাকাত আসবে কি না, তা নিয়ে অনেকে সন্দীহান থাকেন।
সেসবের সমাধান তুলে ধরা হলো:
প্রভিডেন্ট ফান্ড : সরকারি কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ডের জন্য বাধ্যতামূলক যে পরিমাণ টাকা কেটে করে রাখা হয়, সে পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের আগে কর্মচারীর মালিকানায় আসে না। তাই সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডে অর্থ থাকাকালীন তার ওপর জাকাত দিতে হবে না। এ কারণে ওই ফান্ডের টাকা পাওয়ার পর বিগত বছরের জাকাতও দিতে হবে না। তবে যদি কর্মচারী ওই প্রভিডেন্ট ফান্ডের সঞ্চিত অর্থ অন্য কোনো ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে স্থানান্তর করিয়ে নেয়, সে ক্ষেত্রে ওই অর্থ স্বতন্ত্রভাবে বা অন্য জাকাতযোগ্য মালের সঙ্গে যোগ হয়ে নেসাব পরিমাণ হলে যথানিয়মে তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৬০)।
ব্যাংকে সঞ্চয়কৃত টাকা : কোনো ব্যক্তি সঞ্চয়ের জন্য যদি ব্যাংকে টাকা জমা রাখে, তাহলে ঋণমুক্ত অবস্থায় যেদিন তার জমাকৃত টাকা নেসাব পরিমাণ হবে, সেদিন থেকে এক বছর পূর্ণ হলে ওই টাকার ওপর জাকাত দিতে হবে। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ১/২৭০)।
বীমা কোম্পানিতে জমাকৃত টাকা : বীমায় যে পরিমাণের টাকা কাজে লাগানো হয়েছে, তার ওপর জাকাত ওয়াজিব। প্রতিবছর জাকাত আদায় করার সময় নিজ সম্পদের হিসাব করতে হবে। (ফতোয়ায়ে উসমানি : ২/৩৯)।
কোম্পানির শেয়ার : কোম্পানির অংশ ক্রয় করা এ শর্তে জায়েজ আছে যে, যদি এর লেনদেন বৈধ হয়, এ ক্ষেত্রে তার অংশের মূল্যের ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে। (ফতোয়ায়ে উসমানি : ২/৩৯)।