Thursday, November 21, 2024

জাপায় সবচেয়ে বড় ভাঙন

আরও পড়ুন

শেষ পর্যন্ত ভেঙেই গেল টানা তিনটি সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। গতকাল শনিবার সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ। নতুন এই দলের চেয়ারম্যান হয়েছেন রওশন এরশাদ নিজেই। মহাসচিব করা হয়েছে কাজী মামুনুর রশীদকে। কমিটিতে জায়গা পাওয়াদের প্রায় সবাই মূল দল থেকে বহিষ্কৃত কিংবা উপেক্ষিত। এ ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নবঞ্চিত, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার তালিকা থেকে বাদ পড়া কিংবা মনোনয়নবঞ্চিতরাও ভিড়েছেন রওশনের দলে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি জাতীয় পার্টির সবচেয়ে বড় ভাঙন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এই সম্মেলনকে গঠনতন্ত্রবিরোধী উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তারা নতুন একটি দল গঠন করলেও জি এম কাদেরের নেতৃত্বে আমরাই মূল ধারার জাতীয় পার্টি।’

গতকাল শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের বাইরে সম্মেলনের আয়োজন করে রওশন এরশাদের অনুসারীরা। এতে রাজধানী ও আশপাশের এলাকার নেতাকর্মীদের সমাগম বেশি ছিল। জেলা পর্যায় থেকে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত রংপুরের কেউ আসেননি সম্মেলনে। পুরো উত্তরাঞ্চল থেকেই নামমাত্র প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  ভারত ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে পাশে ছিল: কাদের

সম্মেলনে জি এম কাদেরের সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা যোগ দেবেন—গত কিছুদিন ধরে এমন প্রচার চালানো হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত বহিষ্কৃতদের বাইরে সহিদুর রহমান টেপা ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। ১৪ এমপির মধ্যে কেউ আসেননি। এমনকি রওশনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মসিউর রহমান রাঙ্গা, গোলাম মসিহ, এস এম আলম, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনও সম্মেলনে যোগ দেননি।

সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে রওশন এরশাদ বলেন, ‘আজ যদি এই সম্মেলন না হতো, তাহলে জাতীয় পার্টি হারিয়ে যেত। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আমরা হারিয়ে ফেলতাম। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত।’

তিনি বলেন, ‘দলে কোনো বিভেদ নেই। আমরা এক আছি। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দল গোছাতে হবে।’

১২ হাজারের বেশি কাউন্সিলর এবং ডেলিগেট উপস্থিত থাকার দাবি করেছেন আয়োজকরা। সম্মেলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম এ মতিন ও বিএলডিপি চেয়ারম্যান এম নাজিম উদ্দীন আল আজাদ প্রমুখ। ১৪ দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাদের কাউকে দেখা যায়নি।

আরও পড়ুনঃ  বাঙালি সংস্কৃতিকে অস্বীকারকারী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী: কাদের

রওশনের কমিটিতে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ, গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে। দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর কমিটির এসব সিনিয়র নেতার নাম ঘোষণা করেন। পরে মহাসচিব হিসেবে কাজী মামুনুর রশীদের নাম ঘোষণা করেন গোলাম সারোয়ার মিলন।

সম্মেলনে কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলন, সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, শাদ এরশাদ, নুরুল ইসলাম নুরু, রফিকুল হক হাফিজ, এম এ গোফরান, ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া চৌধুরী, শেখ আলমগীর হোসেন, নুরুল ইসলাম নুরু, নিগার সুলতানা রানী, এমএ কুদ্দুস খান, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, শফিকুল ইসলাম শফিক, আমানত হোসেন, ফখরুল আহসান শাহাজাদা, হাজী তুহিনুর রহমান, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, হাজী নাসির, মাসুকুর রহমান, মাহমুদুর রহমান মুন্নি, সাহিনা সুলতানা রিমা, শাহনাজ পারভিন ও শেখ রুনা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  বাতিল হতে পারে ৯টা থেকে ৫টার অফিস সময়

রওশনপন্থিদের এ সম্মেলন সম্পর্কে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কালবেলাকে বলেন, ‘আরেকটি ব্রাকেটবন্দি দল হতে পারে। কিন্তু জি এম কাদেরের নেতৃত্বে আমরাই মূল জাতীয় পার্টি।’

তিনি বলেন, ‘নতুন ভাগের দলকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।’

তবে নিজেদের জাতীয় পার্টির মূলধারা দাবি করে রওশনপন্থি নেতারা বলছেন, জাতীয় পার্টির নিবন্ধন ও প্রতীক তাদের নামে দেওয়ার আইনি লড়াই চলবে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হলেও তা নাকচ হয়েছে। তারা আদালতের শরণাপন্ন হবেন। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি নামে দল পরিচালনায় আইনি লড়াইয়ে সফল হতে চান রওশনপন্থিরা।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ