কাজী নজরুল ইসলাম জাতীয় কবি হওয়া সত্ত্বেও গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে তার চর্চা হয়নি। গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে সাংস্কৃতিক দিক থেকে নজরুল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
তাই নতুন বাংলাদেশে নজরুলের চর্চা বাড়াতে হবে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
‘২৪ এর অভ্যুত্থানে আমাদের নজরুল’ শিরোনামে আলোচনা সভাটির আয়োজন করে কবি নজরুল ইনস্টিটিউট।
সভায় বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, নজরুল গবেষক আব্দুল হাই শিকদার ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ উর রহমান।
আইন উপদেষ্টা বলেন, গত ১৫ বছরে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে জাতীয় কবিকে যেভাবে চর্চা করতে হয়, নজরুলের ক্ষেত্রে তার ছাপ দেখিনি। রাষ্ট্রীয় সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে সবচেয়ে বেশি রবীন্দ্র চর্চা দেখেছি।
একজনকে শেখ হাসিনা সরকার বানিয়েছে রাজনৈতিক ঈশ্বর। এই ঈশ্বরের দাপটের কাছে নজরুলের মতো গণমানুষের প্রতিনিধিকে কখনো তুলে ধরা হয়নি।
বাংলাদেশের সর্বত্র ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিস্তার ঘটেছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সর্বক্ষেত্রে ভারতীয় আধিপত্যবাদ যেভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা অবিশ্বাস্য। এমনভাবে অনুপ্রবেশ করিয়েছে যে, বিয়েতে গেলে দেখা যায়, হিজাব পরা মেয়ে হিন্দি গানে নাচছে। ভারত আমাদের কোনো কিছু ফ্রি দেয় না, কিন্তু এতগুলো চ্যানেল কেন ফ্রি দিয়েছে, সে প্রশ্ন আমরা করতে ভুলে গিয়েছিলাম।
যারা জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের বাংলাদেশের মাটিতেই বিচার নিশ্চিত করবেন বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
মাহমুদুর রহমান বলেন, কবি নজরুল যেমন বিদ্রোহী কবি ছিলেন, তেমনি ছিলেন রোমান্টিক। তিনি একজন অসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি যুদ্ধ করেছিলেন। যেখানে যা কিছ অন্যায় দেখেছেন, তার প্রতিবাদ করেছেন। যখন কেউ স্বাধীনতার কথা বলতে পারেনি, তখন তিনি প্রথম ভারতের স্বাধীনতার কথা বলেন।
নতুন সরকার হলেও এখনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের সব অংশে আমরা এখনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। কোনো কোনো আমলারা মনে হয় আমাদের করুণা করছেন, এমন ভান করছেন।
লেখক ও নজরুল গবেষক আবদুল হাই শিকদার বলেন, দেহ থেকে যেমন আত্মাকে আলাদা করা যায় না, তেমনি নজরুলকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করা যায় না। বাংলাদেশের জন্য কাজী নজরুল ইসলাম অপরিহার্য। একটা জাতির বেঁচে থাকার জন্য যা লাগে, তা আর কারও লেখায় পাওয়া যায় না।
ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ১৫ বছরে নজরুলকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কারণ নজরুল মানেই প্রতিবাদ। ফলে এই আন্দোলনে প্রত্যেকে একেকজন নজরুল হয়ে উঠেছেন।
কাজী নজরুলকে জনগণের সামনে নিয়ে আসার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নজরুল সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নজরুল ইনস্টিটিউটের পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী।