Thursday, November 21, 2024

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা বললে দলগুলো বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে: আসিফ মাহমুদ

আরও পড়ুন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তৃতায় সেটি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ১৯৪৫ সালে জার্মানির ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টিকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তারা নিষিদ্ধ রয়েছে। সেখান থেকেই বোঝা উচিত আওয়ামী লীগের পরিণতি কি হওয়া উচিত।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘নবীন চোখে গণ-অভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

গণ-অভ্যুত্থানের আহতদের চিকিৎসা ও পুনির্বাসনে নানা উদ্যেগ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আসিফ বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের চিকিৎসা ও পূনর্বাসনে আমরা অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি এবং নিচ্ছি। ইতিপূর্বে বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের চিকিৎসার জন্য যেসব খরচ হয়েছে তা সরকারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। পিজি হাসপাতালের সঙ্গে ভিআইপিদের চিকিৎসার জন্য যে সুপার স্পেশালাইজড চালু করা হয়েছিল সেখানে পর্যাপ্ত জনবল ছিল না। সেটিকে শুধুমাত্র জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের বিশেষভাবে চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না তারা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসতে পারে। সেখানে চিকিৎসাদানের জন্য আহতদের আনার প্রক্রিয়া সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। ডাক্তারদের পরামর্শক্রমে আহতদের দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে আহতদের পার্সপোর্ট না থাকা ও অনেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় কিছু জটিলতা রয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখা আমাদের প্রথম প্রয়োরিটির মধ্যে ছিল।

আরও পড়ুনঃ  টঙ্গীতে আগুন, পুড়ে ছাই ৬ দোকান

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। সেইরম একটা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করে আমরা যেন দেউলিয়াত্বের দিকে না যাই সেই বিষয়ে কাজ করতে হচ্ছে। দেশপ্রেমকে ধারণ করে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে লড়াই বাংলাদেশের মানুষ শুরু করেছিল সেই লড়াই আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে একটি ভিন্ন গতি পেয়ছিল। আমাদের সেই লড়াই এখনো রয়েছে। সেই লড়াইয়ের একটি অংশ চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান। এই গণঅভ্যুত্থান আংশিক সফল হয়েছে। কারণ আমাদের এক দফা দাবির মধ্যে ছিল শেখ হাসিনার পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরোধ। কিন্তু এখনো সেই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরুপে বিরোধ করা সম্ভব হয়নি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যখন আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তৃতায় সেটি বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ১৯৪৫ সালে জার্মানির ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টিকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তারা নিষিদ্ধ রয়েছে। সেখান থেকেই বোঝা উচিত আওয়ামীলীগের পরিণতি কি হওয়া উচিত।

আরও পড়ুনঃ  জাহাঙ্গীর কবির নানকের বাসায় অভিযান, যা পাওয়া গেল

আলোচনা সভায় সোশ্যাল অ্যকটিভিস্ট সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানের পরে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। কিন্তু একটা জিনিস স্পষ্ট, প্রত্যেকেই এখন নিজেদেরকে নাগরিকভাবে। সংবিধান সংস্কার কমিটিতে আমি একটা কথা বলেছি বাংলাদেশের অফিসিয়াল নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ থাকতে পারে না। কারণ যে মুহূর্তে এই শব্দের ভেতরে প্রজা থাকবে, তখনই আমাদের মনের ভেতরে একটা ভয় কাজ করে কেউ না কেউ বোধহয় রাজা আছে। নতুন বাংলাদেশ আমি কোন রাজা দেখতে চাই না, আমি দেখতে চাই এই দেশের মালিক এই দেশের জনগণ। দিন যায়, রাজা যায়, সরকার যায় আমাদের মানসিকতা কি বদলায়? আমি যেটা দেখতে চাই এই দেশের মানুষ নাগরিক হয়ে গড়ে উঠছে। কারো তোষামদি করার জন্য যাতে নতুন বাংলাদেশ তৈরি না হয়। দাসত্ব দূর না করতে পারলে কোনদিনও আমাদের এই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিট সফল হবে না।

আরও পড়ুনঃ  দেশে আর ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন হবে না : হাসনাত আবদুল্লাহ

আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, আমাদের অধিকারের প্রয়োজনে আমাদের সবাইকে জাগ্রত থাকতে হবে। আমাদের অধিকার অন্য কেউ আদায় করে দেবে না। আমরা একটা সুষ্ঠু ভোট চাই, এ ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমরা এমন একটা ব্যবস্থা চাই যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে। রাষ্ট্র যারা চালাবেন তারা আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য থাকবেন। আমরা এমন একটা ব্যবস্থা চাই যেখানে আমরা বিচার পাব। আমাদের ধর্ম আলাদা হতে পারে, জাতিগত পরিচয় আলাদা হতে পারে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হতে পারে কিন্তু এই মৌলিক প্রশ্নগুলোতে আমরা সবাই এক। আমাদের মূল যে দাবি, আমরা ন্যায় বিচার চাই, গরীবের অধিকার চাই সেসব থেকে কেউ যেন আমাদের সরিয়ে দিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এ ছাড়া আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, অধ্যাপক মোহাম্মদ জামালউদ্দিন, অধ্যাপক মো. লুৎফুল এলাহী, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ফয়সাল মাহমুদ প্রমুখ।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ