Thursday, November 21, 2024

ইরানে ইসরায়েলি বিমান হামলার বিষয়ে বিস্তারিত যা জানা গেছে

আরও পড়ুন

ইরান জানিয়েছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধ করতে পেরেছে, তারপরও দুই সেনা নিহত হয়েছেন।

ইরানে ইসরায়েলি ইসরায়েলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রর হামলার ঠিক ২৫ দিন পরে দেশটি থেকে প্রায় ১৪৫০ কিলোমিটার দূরে ইরানে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

শনিবার ইসরায়েলে স্থানীয় সময় রাত প্রায় ২টার দিকে ইরান থেকে বিস্ফোরণ ঘটার খবর আসতে শুরু করে, এতে দেশটিতে ইসরায়েল পাল্টা হামলা শুরু করেছে এমন ইঙ্গিত পরিষ্কার হতে থাকে।

এরপর থেকে পরবর্তী তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তিন ধাপে তীব্র হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর ডজন ডজন যুদ্ধবিমান ও আকাশযান ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান ও ইলাম প্রদেশে সামরিক কমপ্লেক্স, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কারখানা এবং স্থল থেকে স্থলে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারগুলোকে লক্ষ্যস্থল করে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০ ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যে আঘাত হানা হয়েছে। ইসরায়েলে সম্ভাব্য পাল্টা হামলা না চালাতে ইরানকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ইরান জানিয়েছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধ করতে পেরেছে, তারপরও দুই সেনা নিহত হয়েছেন এবং কিছু স্থানে ‘সীমিত ক্ষয়ক্ষতি’ হয়েছে। ইসরায়েলি হামলার ‘আনুপাতিক প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হবে বলে ইরানের আধা স্বায়ত্তশাসিত একটি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে।

প্রথম ধাপে রাত ২টায় তেহরানের পাশাপাশি সিরিয়া ও ইরাকে থেকেও বিস্ফোরণের খবর আসে। এ সময় তিনটি দেশেরই আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। হামলার প্রথম ধাপে তিনটি দেশেরই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে লক্ষ্যস্থল করা হয় বলে বিভিন্ন খবরে ইঙ্গিত দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ  নিজের অস্ত্রের গুলিতে গু‌লি‌বিদ্ধ এএসআই

ইসরায়েলি বিমান বাহিনী যেন কোনো বাধা ছাড়াই ইরানের লক্ষ্যস্থলগুলোতে হামলা চালাতে পারে সেটি নিশ্চিত করতেই প্রথম ধাপের হামলাগুলো চালানো হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে ঘটনার সময় পরিস্থিতি পরিষ্কার ছিল না। বিস্ফোরণের শব্দে তেহরানের আতঙ্কিত বাসিন্দারা রাস্তায় নেমে আসেন। ইরানের রাজধানীর বিমানবন্দরগুলোতে আঘাত হানা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছিলেন তারা।

ইসরায়েলের স্থানীয় সময় রাত ২টা ৩০ মিনিটে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র নিশ্চিত করে বলেন, “আইডিএফ ইরানের বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট হামলা শুরু করেছে। এটা চলিত মাসের প্রথমদিকে ইসরায়েলে চালানো ইরানি হামলার জবাব।”

এ সময় ইরান জানায়, তেহরান ও অন্যান্য স্থান থেকে যে বিস্ফোরণের শব্দগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধ করছে, তার আওয়াজ।

এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিবিসি জানায়, ইসরায়েলে ইরানের কোন স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানছে তা পরিষ্কার নয়। ওই সময় তেহরান দাবি করে, তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা স্বাভাবিক আছে। ‘সামরিক লক্ষ্য’ ছাড়া অন্য কোনো স্থাপনাকে লক্ষ্যস্থল করা হচ্ছে কি না, ইসরায়েল তখনও তা প্রকাশ করেনি।

আরও পড়ুনঃ  স্বামীর দ্বিতীয় বিয়েতে হাজির স্ত্রী, এলাকায় তোলপাড়

স্থানীয় সময় প্রায় ৩টার দিকে ইসরায়েল জানায়, যেসব ঘটনা ঘটছে সে বিষয়ে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘বিস্তারিত হালনাগাদ তথ্য দিয়ে অবহিত করেছে’। এর প্রায় আধ ঘণ্টা পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন জানায়, ইরানে হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত নয়, কিন্তু তাদের এ হামলার বিষয়ে জানানো হয়েছে।

এরপর ভোররাত সোয়া ৪টার দিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ইরানে ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানানো হয়েছে।

ভোররাত ৪টার আগ পর্যন্ত ইরানের কোথায় ও কোন স্থাপনায় হামলা চালানো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো সে বিষয়ে অন্ধকারেই ছিল। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো খবর দেয়, সিরিয়া জানাচ্ছে ইসরায়েল তাদের দেশের কেন্দ্রস্থলে ও দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক এলাকাগুলোতে বিমান হামলা চালাচ্ছে। এরপর ইরান থেকে আরেক ধাপের হামলার খবর আসতে শুরু করে।

এ সময় ইরান তাদের আকাশে হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা করছে এমন কিছু ফুটেজ গণমাধ্যমের হাতে আসে।

এই পর্যায়ে ইসরায়েল ইরানের স্থল থেকে স্থলে আঘাত হানার ক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কারখানাগুলোতে আঘাত হানে বলে এ বিষয়ে জ্ঞাত ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা দেশটির ওয়াইনেট নিউজ ওয়েবসাইটকে জানান।

ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলোর পাইলটরা শত্রু দেশের আকাশে থাকা অবস্থায়ই দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কমান্ডের বাংকারে বসে আছেন, এমন ছবি প্রকাশ করতে শুরু করে নেতানিয়াহুর দপ্তর।

আরও পড়ুনঃ  এক মিনিটের জন্য শেষ বিসিএসের স্বপ্ন, হাউমাউ করে কান্না

নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, সর্বশেষ পর্যায়ের হামলা ভোর ৫টা বাজে শুরু করে প্রায় আধ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করা হয়। এ সময় ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র, ইউএভি ও উৎক্ষেপণ স্থানগুলোতে হামলা চালানো হয়।

ভোর ৬টায় আইডিএফ ঘোষণা করে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও স্থল থেকে স্থলে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে আঘাত হানার পর নিরাপদে ফিরে এসেছে। এ সময় তারা জানায়, ইরানে চালানো সামরিক অভিযানের নাম ‘অনুতাপের দিন’।

এরপর ইরানের কী কী স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে এক বিবৃতিতে তার বিস্তারিত তুলে ধরে তারা।

আইডিএফের এ ঘোষণার প্রায় ২০ মিনিট পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় হোয়াইট হাউজের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে পুরোপুরি সমর্থন করে আর ইরানকে ইসরায়েলে পাল্টা হামলা না চালানোর জন্য সতর্ক করেছে। তবে ইসরায়েলের ধারণা, ইরান এ হামলারও জবাব দেবে।

রাতভর ইসরায়েলের হামলায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করার পর ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ইরান প্রথমবারের মতো জানায়, বেশ কয়েকটি এলাকায় ‘সীমিত ক্ষয়ক্ষতির’ ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে ‘ইসরায়েলি আগ্রাসন’ প্রতিরোধ করতে পেরেছে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ