Friday, November 22, 2024

মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশি প্রভাবশালীরা

আরও পড়ুন

বিক্ষোভ ও গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। সরকার পতনের পর ইতোমধ্যে বিভিন্ন মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি ও রাজনীতিক। গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এই পরিস্থিতিতে আত্মগোপনে থাকা প্রভাবশালী এমপি ও রাজনীতিকরা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্রের সহায়তায় ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।

ওই গণমাধ্যমের দাবি, সীমান্ত পাড়ি দেয়ার বিনিময়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দুই পাশের সিন্ডিকেটের চক্রের সদস্যদের সঙ্গে ৫-১০ লাখ টাকার চুক্তি হচ্ছে তাদের। ইতোমধ্যে ওই সিন্ডিকেটের সহায়তায় বাংলাদেশি এক এমপি ও তার পরিবারের ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বিস্তারিত তথ্যও দিয়েছে গণমাধ্যমটি। তবে বাংলাদেশি ওই এমপির নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার কাশারীবাজার থেকে একজন এমপি পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী কাথুলিবাজার এলাকার একটি বাড়িতে ফোন করেন। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে কিছু দিনের জন্য দেশ ছেড়ে ভারতে ‘নিরাপদ আশ্রয়’ চান তিনি।

এর কিছুক্ষণ পর কাথুলিবাজার থেকে ফোন আসে নদিয়ার করিমপুর-২ ব্লকের রাউতবাটি গ্রামে। ফোনের দুই প্রান্তের ব্যক্তির মধ্যে প্রায় পাঁচ মিনিট কথা হয়। যিনি আশ্রয় চাইছেন তার ‘প্রোফাইল’, রাজনৈতিক ঝুঁকি, আর্থিক সক্ষমতা-সহ বিভিন্ন বিষয় সংক্ষেপে জেনে নিয়ে ওই এমপিকে সীমান্ত পার করে ভারতে প্রবেশ করানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।’

আরও পড়ুনঃ  স্বামীর মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর মারা গেলেন স্ত্রীও

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘এ সময় জানিয়ে দেয়া হয়, ভারতে আসার জন্য ওই এমপির পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু খরচ পড়বে ভারতীয় মুদ্রায় এক লাখ করে টাকা। এ ছাড়া যতদিন ‘নিরাপদ আশ্রয়ে’ থাকবেন, ততদিন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নজর এড়িয়ে থাকার জন্য মাসিক ১০ লাখ টাকা দিতে হবে! টাকার অংক নিয়ে দর কষাকষির এক পর্যায়ে সীমান্ত পার করার বিনিময়ে প্রত্যেকের মাথাপিছু ৭০ হাজার টাকা আর আশ্রয়ের জন্য মাসিক ৫ লাখ টাকা দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।’

ভারতীয় গণমাধ্যমের তথ্যমতে, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া এলাকার এই সিন্ডিকেট চক্রের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গত সোমবার রাতে মেহেরপুর সদর থেকে পরিবারকে নিয়ে সীমান্তের দিকে রওনা দেন বাংলাদেশি ওই সাবেক সংসদ সদস্য।

পরে বাংলাদেশের একটি গ্রামে একদিন অপেক্ষার পর চুক্তির টাকা পরিশোধ করে কাথুলি ও কুলবেড়িয়া হয়ে উন্মুক্ত সীমান্ত দিয়ে পরিবারসহ তিনি পশ্চিমবঙ্গের একটি গ্রামে গিয়ে পৌঁছান। বাংলাদেশের মইনুদ্দিন (নাম পরিবর্তিত) এবং পশ্চিমবঙ্গের দেবাংশু (নাম পরিবর্তিত) মিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাঞ্চল্যকর এই ‘অপারেশন’ সফল করেন বলেও উল্লেখ করেছে গণমাধ্যমটি।

আরও পড়ুনঃ  কবর দেওয়ার সময় কেঁদে উঠল ‘মৃত’ নবজাতক

প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে এমন অবৈধ উপায়েই বাংলাদেশের প্রভাবশালীরা ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন। তাদের নিরাপদে পৌঁছে দিতে কাজ করছে একাধিক চক্র। চক্রের সদস্যরা সীমান্ত পারাপারের বিনিময়ে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের অর্থ নিচ্ছেন। কেউ মাথাপিছু লাখ টাকা নিচ্ছেন, তো কেউ ৫০ হাজার। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আর্থিক সঙ্গতি এবং সামাজিক পরিচিতি বুঝেই টাকার পরিমাণ নির্ধারণ করছে চক্রের সদস্যরা। ইতোমধ্যে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

ওই গণমাধ্যমকে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের বাসিন্দা ও পাচারচক্রের সদস্য দেবাংশু জানিয়েছেন, ‘‘কাঁটাতার পার হয়ে আমাদের চাষের জমি আছে। প্রতিদিন সেখানে যাতায়াত করি। ওদিক থেকে বেশ কয়েকজন পরিচিত, আত্মীয়-স্বজনেরা ভারতে আসার জন্য মোটা টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা শুধু পার করে এখানে নিয়ে এসেছি। রাখার দায়িত্ব আমাদের নয়। সেটা দেখে অন্য লোক।’

দেবাংশু বলেন, ‘‘বিএসএফ এখন খুব সজাগ। সেটা ঠিক। তবে গ্রামে আমাদের সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক। তাই কাউকে আশ্রয় দিয়েছি জানলে কেউ মুখ খুলবে না।’’ কিন্তু কাজটা তো অনৈতিক? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে যারা আসছেন, তারা তো সত্যিই বিপদে পড়েছেন। বিপদে মানুষকে আশ্রয় দেয়া তো মানুষেরই কর্তব্য!’’

আরও পড়ুনঃ  প্রথমবারের মতো দেশের ইতিহাসে সরকারের অংশ হলেন ঢাবির দুই শিক্ষার্থী

এ বিষয়ে বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি একে আর্য বলেন, ‘‘প্রতিবেশি দেশের অশান্ত পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকায় টহল কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের সঙ্গে জনসংযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। অনুপ্রবেশের সব রকম খবর রাখার চেষ্টা করছে বিএসএফ। কয়েকটি অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকেও দিয়েছেন জওয়ানরা, পাশাপাশি গ্রেপ্তার হয়েছেন বেশ কয়েকজন।’’

অবৈধ অনুপ্রবেশের বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) উপ-মহাপরিচালক (যোগাযোগ) কর্নেল শফিউল আলম পারভেজের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘‘যারা রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনি এবং অন্যায় কাজ করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন। বাংলাদেশে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যাতে কোনোভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় না পায়, তার জন্য আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ জানাব।’’

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ