বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী অঙ্গসংঠন এবং পুলিশের হামলা ও গুলিতে মৃত্যু হয়েছে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীর। এমনকি সাধারণ মানুষ ও শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম হামলা চলতে থাকে।
এ অবস্থায় আগস্টে এসে শিক্ষার্থীরা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এক দফা দাবি তুলেন। আর তাদের এই দাবিতে সব শ্রেণিপেশার মানুষ একাত্মতা পোষণ করেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও জনতার তোপের মুখে সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
তার এই পদত্যাগে উল্লাসে মেতে উঠেছেন দেশের সব মানুষ। এ তালিকায় যেমন শোবিজ তারকারা রয়েছেন, একইসঙ্গে রয়েছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর, মডেল ও ইউটিউবাররাও। এদেরই একজন সালমান মুক্তাদির।
এ অভিনেতা কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়েছেন। এমনকি রাজপথে নেমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনেও অংশ নিয়েছেন সালমান মুক্তাদির। আর জনতার রোষানলে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার দুপুর ৩টার দিকে ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে সালমান মুক্তাদির লিখেছেন, ‘মহান আল্লাহ এই জেন-জেড (GEN-z) প্রজন্ম দ্বারা আমাদের সবাইকে পৃথিবীর ভয়ংকর ও অমানবিক স্বৈরশাসকের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তারা (জেন-জেড) আমাদের জন্য যারা করেছে, তা বিশ্ব ও অন্যান্য দেশ করতে পারেনি।’
তিনি লিখেছেন, ‘নিঃস্বার্থভাবে আত্মত্যাগকারী এই প্রজন্মের কাছে আমরা সবাই ঋণী। আল্লাহ তাদের ওপর অপার রহমত ও আশীর্বাদ বর্ষন করুক। আর আমি এই জেন-জেডকে সালাম জানাই। আপনারা আমাদের নায়ক।’
এছাড়া একইদিন অন্য একটি পোস্টে সালমান মুক্তাদির লিখেছেন, ‘অহংকার পতনের মূল। অহংকারী হয়ো না। চুর পালালে আপনি চুরি করার স্বাধীনতা রাখেন না। স্বৈরাচর পালালে আপনি অসভ্য হয়ে যাবেন, এমন কোনো নিয়ম নেই। বাংলাদেশ গরিব, অশিক্ষিত শ্রেণিপেশার মানুষের দেশ―এমনটা যেন কেউ বলতে না পারে। সৈনিকের মতো এ জয়কে ভদ্র মানুষের মতো উদযাপন করুন। আপনারা নিজেদের দোষে কেউ ধ্বংস হবেন না। বারবার বললাম।’
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচি ঘিরে রোববার ঢাকাসহ সারাদেশে সরকার সমর্থিত নেতাকর্মী ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ জন ছাড়াও কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জে পৃথক হামলায় হাইওয়ে থানার এক পুলিশসহ মোট ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাইয়ের প্রথম থেকে আন্দোলন করে আসছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় গত ১৫ জুলাই রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায় ছাত্রলীগ। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধে গুলি চালায় পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগ এবং দলটির সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের হামলায় কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী ও মানুষের মৃত্যু হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ ও আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা।