কোরবানির ঈদের আমেজের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে বিশ্বের অন্যতম বিষাক্ত সাপ রাসেল’স ভাইপার। যে সাপের কামড়ে মৃত্যু অনেকটা নিশ্চিত। কিন্তু কেন এত ভয়াবহ এই সাপ?
কি এমন আছে এর বিষে?
সম্প্রতি দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে রাসেল ভাইপার শুধু তাই না, ঢাকার খুব কাছাকাছি চলে এসেছে এই সাপ। অন্য সাপ যেখানে মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়, রাসেল ভাইপার মানুষ দেখলে তেড়ে এসে কামড়ায়। হিংশ্রতার দিক থেকে বিশ্বে সবচেয়ে উপরে রয়েছে রাসেল ভাইয়াপার।
বিশ্বে যে কয়টি বিষধর সাপ রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। এই সাপকে বাংলাদেশের মানুষ চন্দ্রবোড়া সাপ নামেও চিনে। ইতমধ্যেই এর কামড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু প্রাণহানির খবরও পাওয়া গেছে। ভাইপার গোত্রের এই সাপের বিচরণ আমাদের এই ভারতীয় উপমাহাদেশে। এই সাপটির দেহ সাধারণত মোটা, লেজ সরু ও ছোট হয়। মাথা চ্যাপটা ও ত্রিভুজাকার। সাপটির গায়ের রঙ বাদামি। অনেকটা শুকনা পাতার মতো। আর এজন্যই সাপটি খুব সহজেই শুকনো পাতার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে পারে।
রাসেল ভাইপারের জিহ্বার রঙ বাদামি অথবা কালো হতে পারে। এর সারা গায়ে গাড় বাদামী বা কালো গোল গোল দাগ থাকে। গোলাকার এই দাগগুলো দেখতে অনেকটা চাঁদের মতো। আর তাই এই সাপকে আমাদের দেশে চিন্দ্রবোড়া নামেও ডাকা হয়। দেখতে অনেকটা অজোগরের মত। পেটের দিকে যে আঁশ থাকে তার রঙ সাদা।
রাসেল ভাইপারের বিষ দাঁত তুলনামূলক লম্বা হয়, প্রায় ১৬ মিলিমিটিরা পর্যন্ত হতে পারে। এই বিষদাঁত পৃথিবীতে সব সাপের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিষদাঁত।
সাধারণত সব সাপেরই একটা বৈশিষ্ট থাকে, তা হচ্ছে, এরা মানুষকে এড়িয়ে চলে। কিন্তু রাসেল ভাইপারের ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারেই উলটো। এরা মানুষ দেখলে আরও আক্রমণাত্বক হয়ে উঠতে পারে। বিষধর সাপ হিসেবে রাসেল ভাইপারের অবস্থান পৃথিবীতে ৫ম হলেও হিংশ্রতার দিক দিয়ে এদের অবস্থান সবার উপরে। এদের হিংশ্রতা এত বেশি যে এক সেকেন্ডেরও অনেক কম সময়ে এরা কামড় বসিয়ে দিতে পারে। এরা প্রচন্ড জোরে হিস হিস শব্দও করতে পারে
রাসেল ভাইপারের আচার আচরণ অন্য সাপের তুলনায় একেবারে উলটো। এরা সাধারণত দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে এবং এ সময়ই বেশি মানুষকে আক্রমণ করে। এরা ঘণ জঙ্গল এড়িয়ে চলে। সাধারণত ঘাসে ঢাকা খোলা মাঠ, ফসলি জমি ইত্যাদি জায়গায় এদের বিচরণ। রাসেল ভাইপার কামড় দিলে কামড়ের জায়গায় প্রচন্ড ব্যাথা হয় আর ফুলে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আশপাশের জায়গাও ফুলে যায়।
বিভিন্ন মেডিকেল জার্নাল থেকে জানা যায় যে রাসেল ভাইপার কামড় দিলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যদি এই সময়সীমার মধ্যে এন্টি ভেনম চিকিৎসা শুরু করা যায় তবে হয়ত রোগীর জীবন বাচানো সম্ভব।
বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী আমাদের দেশে বছরে অন্তত ৫ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে সাপে কামড়ায়। যার মধ্যে অন্তত ৬ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। আর গত এক মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি ঢাকার আশপাশেও দেখা গেছে রাসেল ভাইপার। এদের কামড়ে ইতমধ্যে বেশ কিছু মানুষের মৃত্যুও হয়েছে।