অবশেষে মুক্তি পেলেন এনজিওর ঋণের দায়ে ৩ বছরের শিশুকে রেখে কারাগার যাওয়া সেই মা খালেদা পারভিন। মুক্তি পেয়েই আদরের শিশুকন্যা ফাতেমাকে বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের আমলি আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান খালেদা।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এনজিওর করা মামলায় খালোদাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে গ্রেফতারের সময় উল্লাপাড়া মডেল থানা চত্বরে ৩ বছরের শিশু কন্যা ফাতেমাকে রেখে পুলিশ ভ্যানে ওঠার মুহূর্তে মা-মেয়ের কান্নায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আর সে দিন সেই প্রতিবেদনটি ‘ছলছল চোখে কারাগারের পথে খালেদা, বুকফাটা কান্না শিশুকন্যার’ শিরোনামে প্রকাশ করে সময় সংবাদ। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ছোট শিশুর কান্নাজড়িত মুখ হৃদয়ে দাগ কাটে সবার।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর ওই দিন রাতেই বিষয়টি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠিত বহুজাতিক এক শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকের নজরে আসে। চট্টগ্রামের ওই শিল্প প্রতিষ্ঠান কারাগারে বন্দি খালেদা ঋণ পরিশোধসহ আইনি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
পরদিন সময় সংবাদের মাধ্যমে খালেদার সুদসহ ঋণের সব অর্থ পরিশোধ করা হয় ও আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়। তবে ঈদের ছুটির কারণে আদালত বন্ধ থাকায় খালেদাকে জামিন করানো সম্ভব হয়নি। পরে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) আদালত খুললে জামিনে মুক্ত হন খালেদা।
এ বিষয়ে খালেদার স্বামী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, উদ্দীপন নামের একটি সংস্থা থেকে দুই বছর আগে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তার স্ত্রী। সংসারের চরম দুর্দিন হওয়ায় খালেদাকে নিয়ে ছয় মাস হলো ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ নিয়েছিলাম।
ইব্রাহিম হোসেন জানান, এর আগে বেশ কয়েকটি কিস্তিতে তিনি ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। সুদ আসল মিলে ১৮ হাজার ৩০০ টাকা পেত ওই ঋণদানকারী সংস্থা। ঈদের আগের দিন রাতে স্ব-পরিবারে বাড়িতে ফিরলে উদ্দীপনের করা ঋণের মামলায় উল্লাপাড়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করে খালেদাকে। এ সময় আমার ৩ বছরের মেয়ে ফাতেমার কান্না থামছিল না। মাকে না পেয়ে থানায় মধ্যে অঝোরে কাঁদছিলো ফাতেমা। পরে আদালত খালেদাকে কারাগারে পাঠায়।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনাটি সময় সংবাদে প্রকাশ হবার পর আমাদের সব ঋণ পরিশোধ করেন দিয়েছেন একজন। সেই সঙ্গে মামলাটি প্রত্যাহারে সব ব্যবস্থা করেছেন। এখন আর কোনো ঋণ নেই আমাদের। আমাদের এই বিপদে যারা পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের সবার জন্য আমার পরিবারে পক্ষ থেকে অনেক দোয়া রইলো বলে জানান তিনি।
উদ্দীপন এনজিওর লিগ্যাল এডভাইজার অ্যাডভোকেট সুমন জানান, সুদসহ ঋণের সব অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। এ জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মামলাটি প্রত্যাহারের সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।