নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে পর্যটনকেন্দ্র মুছাপুর ক্লোজার এলাকায় পর্যটকদের (যাদের মধ্যে একজন পুলিশ কনস্টেবল) মারধরের অভিযোগ উঠেছে ফেনীর সোনাগাজী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) তসলিম হুসাইনের বিরুদ্ধে।
ঈদুল ফিতরের পরদিন শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মুছাপুর ক্লোজার সড়কে এ মারধরের ঘটনা ঘটে।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকালে ওই ঘটনার কিছু ভিডিও ফুটেজ এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সহকারী পুলিশ সুপার তসলিম হুসাইন হাতে একটি লাঠি নিয়ে ২/৩ জন ব্যক্তিকে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। একপর্যায়ে তসলিম হুসাইনের সঙ্গে আরও কয়েকজন মিলে ওই পর্যটকদের রাস্তায় ফেলে লাথি-ঘুষি মারছেন।
এ ঘটনায় আহতরা হলেন: নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার সুন্দলপুর ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আলী আজগর (৩৬) ও তার ভাই পুলিশ কনস্টেবল ওমর ফারুক (৩১) ও আজগরের স্ত্রীসহ (২৭) আরও বেশ কয়েকজন।
আলী আজগর অভিযোগ করে বলেন, ঈদে স্ত্রী, দুই সন্তান, ভাই ওমর ফারুক ও কয়েকজন বন্ধু নিয়ে মুছাপুর ক্লোজারে ঘুরতে যান আজগর। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘুরাঘুরি শেষে নিজের এলাকায় মোটরসাইকেল যোগে ফিরছিলেন তিনি। ওই মোটরসাইকেলে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান ছিল। কিছু পথ আসার পর বিপরীত দিক থেকে একটি পুলিশের গাড়ি আসে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সড়কটির দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। এরইমধ্যে গাড়ি থেকে একজন (সহকারী পুলিশ সুপার তসলিম হুসাইন) একটি লাঠি নিয়ে নেমে আসেন। তিনি গাড়ি থেকে নেমেই লোকজনকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এ সময় আমি (আজগর) উনাকে গালাগালি করতে নিষেধ করলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে কলার ধরে মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করেন। আমাকে বাঁচাতে আমার স্ত্রী ও পুলিশ কনেস্টবল ভাই ওমর ফারুক এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে উনাদের গাড়িতে থাকা আরও ৫ থেক ৬ জন একত্রিত হয়ে আমাদের সবাইকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন। এতে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয় এবং আমার ভাইয়ের হাত মচকে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। আমরা কবিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। সেখানে একদিন চিকিৎসা শেষে আমরা বাড়িতে ফিরে যাই। একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার সাধারণ মানুষের প্রতি এমন নির্মমতার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি আমরা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দেব।’
বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি দাবি করে সহকারী পুলিশ সুপার তসলিম হুসাইন বলেন, ওইদিন আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমি মুছাপুর ঘুরতে যাই। সড়কের যানজট থাকায় আমি প্রথমে গাড়ি থেকে নেমে যাই যান চলাচল স্বাভাবিক করতে। কিন্তু এসময় সড়কের উল্টো পাশে একটি মোটরসাইকেলে নিজের স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আজগর। আমি এগিয়ে গিয়ে তাকে সরতে বললে সে আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এরইমধ্যে গাড়ি থেকে আমার ভাইসহ অন্যরা নেমে আসে এবং আজগরের ভাই ফারুক আমাকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দিলে আমরা কথা বলি। এ সময় তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে আজগর আমার ভাইকে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে শুরু করলে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে আমি ও ওমর ফারুক এগিয়ে গিয়ে তাদের শান্ত করি। বিষয়টি তাদের সাথে বসে মীমাংসা করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
ফেনী পুলিশ সুপার (এসপি) জাকির হোসেন বলেন, এ বিষয়ে কেউ আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দাফতরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সহকারী পুলিশ সুপার তসলিম হুসাইন গত ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সোনাগাজী সার্কেলে যোগদান করেন। তার বাড়ি ফরিদপুর।