অধ্যক্ষের চাহিদা মতো ঘুষের টাকা না দেওয়ায় বেতন ভাতা বঞ্চিত হচ্ছেন গুরুদাসপুরের বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের চার শিক্ষক। ভুক্তভোগি শিক্ষকরা প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। তাতেও টনক নড়ছে না অধ্যক্ষ একরামুল হকের।
জানা গেছে, বাংলা বিষয়ের মো. শাহীন আলম, মনোবিজ্ঞানের মো. শামসুল আলম, আব্দুল্লাহ আল মাওদুদ, ভূগোলের মো. আনোয়ার হোসেন, জিএম কামরুজ্জামান, মো. আলী জাফর ও গণিতের প্রশান্ত কুণ্ডকে সরকারিভাবে প্রভাষক পদে অস্থায়ী নিয়োগ দান করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সরকারি শিক্ষক-কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮’ এর বিধি-৫, বিধি-৬ এবং সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০০০ এর বিধি-৩ ও বিধি-৫ মোতাবেক বকেয়াসহ ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে বেতন ভাতা চালুর কথা।
শিক্ষামন্ত্রীকে পাঠানো শিক্ষকদের ওই অভিযোগে জানা গেছে, ২০১২ সালে প্রভাষক পদে নিয়োগ পান এই ৭ শিক্ষক। কলেজটি সরকারিকরণ হয় ২০১৬ সালে। কিন্তু বাংলা, ভূগোল, মনোবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে অধিভুক্তি জটিলতায় সে সময় তাদের বেতন ভাতা চালু হয়নি। জটিলতা নিরশন হওয়ার পর গত বছরের মার্চে গেজেট প্রকাশ করা হয়। গেজেট অনুযায়ী ২৩ সালের ২৫ জুলাই সরকারিভাবে আবারও যোগদান করেন তারা। কলেজ সরকারিকরণের তারিখ হতে বেতন ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও কলেজের পক্ষ থেকে বেতন ভাতার চাহিদা পাঠানো হয়নি।
ভুক্তভোগী শিক্ষক মো. শাহীন আলম ও মো. শামসুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, গেজেটের পর বেতন ভাতার চাহিদার জন্য তারা অধ্যক্ষ একরামুল হককে বার বার অনুরোধ করেন। কিন্তু অধ্যক্ষ পাত্তা দেননি। উপরন্ত কলেজের বাংলা বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আব্দুর রশিদের মাধ্যমে ১ লাখ টাকা করে ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ দেওয়ায় একইসঙ্গে নিয়োগ পাওয়া গণিত বিষয়ের শিক্ষক প্রশান্ত কুণ্ডুর বেতন ভাতা চালু হয়েছে। অধ্যক্ষের সঙ্গে লিয়াজো করায় শিক্ষক জিএম কামরুজ্জামান ও আলী জাফরের বেতন প্রক্রিয়াও চালুর পথে।
তবে শিক্ষক আব্দুর রশিদ ইত্তেফাককে বলেন, অধ্যক্ষের কথা মতোই তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন।
ভুক্তভোগী আরও দুই শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মাওদুদ ও আনোয়ার হোসেন বলেন, অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাদের বেতন ভাতার চাহিদা পাঠাতে গড়িমশি শুরু করেন অধ্যক্ষ একরামুল হক। বাধ্য হয়ে তারা প্রতিকার চেয়ে শিক্ষামন্ত্রী, মাউশিসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এখন অভিযোগ প্রত্যাহার করতে শিক্ষকদের বার বার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিচ্ছেন অধ্যক্ষ।
তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিনাবেতনে চাকুরি করছেন তারা। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছেন। এ কারণে অধ্যক্ষকে ঘুষের টাকা দিতে না পেরে ফাঁকা চেক দিয়েও নিস্তার পাননি।
অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ড. একরামুল হক অভিযোগ অস্বীকার করে ইত্তেফাককে বলেন, চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। মাস খানেকের মধ্যে শিক্ষকদের বেতন চালু হয়ে যাবে। তা ছাড়া শিক্ষকদের বেতন ভাতার চাহিদা পাঠাতে তিনি কোনো ঘুষ দাবি করেননি। তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।