Thursday, January 30, 2025

যেখানে জোর করে বিয়েতে বাধ্য করা হয়

আরও পড়ুন

সরকারি চাকরি পাওয়ার পর যুবকের জীবন বদলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন ভয়ে ঘর থেকেই বের হচ্ছেন না তিনি। উঁকি-ঝুঁকি মেরে দেখছেন, বাইরে অপরিচিত গাড়ি বা মানুষ আছেন কিনা। তাকে জোর করে ধরে নিয়ে বিয়ে করিয়ে দেওয়া হতে পারে, ঘিরে ধরেছে এমন ভয়। তুলে নিয়ে গিয়ে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বিয়ের ঘটনা শুনতে অবাক করা মনে হলেও ভারতের বিহারে এটাই যেন স্বাভাবিক।

জোরপূর্বক এমন বিয়েকে পাকাদুয়া বিয়ে বা শটগান বিয়েও বলে। যেখানে বরকে অপহরণ করে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে বিয়ে করিয়ে দেওয়া হয়। বিহারে এই সংকটের মূলে রয়েছে কুখ্যাত যৌতুক প্রথা। বিয়ের কথা পাকাপাকি হওয়ার আগেই বরপক্ষ যৌতুক দাবি করে বসে এ রাজ্যে। তখন নিরুপায় হয়ে যায় কনেপক্ষ। তাই ভারতের অন্যতম গরিব এই রাজ্যে পাকাদুয়া বিয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

আরও পড়ুনঃ  সৌদিসহ আরব বিশ্ব ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত: বাইডেন

১৯৭০-র দশকে প্রথম শটগান বিয়ের ব্যাপক উত্থান ঘটে। ওই সময় যৌতুক ও বেকারত্বের সমস্যা প্রকট হয়। তাই চাকরিজীবী পাত্রের চাহিদা বেড়ে যায় বহু গুণ। ১৯৮০-র দশকে বিহারে পাকাদুয়া বিয়ের ঘটনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। এই ধারা ২০০০-র দশকেও চলমান থাকে। তবে ২০০৯ সালের পর হঠাৎ কমে যায় পাকাদুয়া বিয়ে। কিন্তু সম্প্রতি পাকাদুয়া বিয়ে আবারও ফিরে এসেছে এবং এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।

পাকাদুয়া বিয়ের ভয়ে অনেকেই বাস করছেন ভিন্ন শহরে। রাজ্য সরকারের অপরাধের রেকর্ডও বলছে, সেখানে জোরপূর্বক বিয়ে বেড়েছে বহু গুণ। কিন্তু বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ। রাজ্য পুলিশেরই একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভাষায়, প্রতি ৪টি ঘটনার মধ্যে মাত্র একটি লিপিবদ্ধ করা হয়। সম্প্রতি সরকারি চাকরির প্রতি যুবকদের ঝোঁক বাড়ায়, এ ধরনের অপরাধও বেড়েছে।

আরও পড়ুনঃ  মুসলিম দেশ জর্ডান কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?

বেকারত্বের সংকট জোরপূর্বক এই বিয়ের মূল কারণ। ভারতে বেকারত্বের জাতীয় গড় ১০ শতাংশ হলেও বিহারে ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে তা ১৩.৯ শতাংশ। তাই সরকারি চাকরিজীবী যুবক পাত্রীর পরিবারের কাছে সোনার হরিণ। এই অপহরণ চক্র চাকরির কোচিংগুলোর কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। চাকরি ভেদে পাত্রের দামও নির্ধারিত রয়েছে। কনেপক্ষ চাইলে মাসিক কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুরো প্রক্রিয়াকে আনজাম দিতে জেলাজুড়ে সেফ হাউস, আইনজীবী এমনকি স্থানীয় ফটোগ্রাফারও রয়েছে এই চক্রের। অপহরণের আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলে পরিকল্পনা। আবার কিছু কিছু গ্যাং আছে, যাদের প্যাকেজে সুরক্ষা সার্ভিস, আইনি নথিকরণ এবং অনিচ্ছুক বরকে বোঝানোর জন্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  যুক্তরাষ্ট্রের সামরিকঘাঁটিতে ৫ রকেট হামলা

সূত্র : টাইমস নাউ

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ