আমরা শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম, সঠিক পথে চলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিঃশেষ করবেন না। তিনি শোনেননি, তিনি বলতেন শেখ হাসিনা পালায় না, আজ তিনি ঠিকই নেতাকর্মীদের ফেলে পালিয়ে গেছেন। কোথায় পালালেন? আমরা বলেছিলাম ভারত তাকে ক্ষমতা রাখছে, আজ সেটাই প্রমাণ হলো, তিনি শেষ পর্যন্ত ভারতেই পালালেন।
বুধবার (৭ আগস্ট) দলটির পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।
হিংসা-হানাহানি, জ্বালাও পোড়াও ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, এটা যারা করছে তাদের অবিলম্বে এসব বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমরা দীর্ঘসময় ধরে একটি ফ্যাসিবাদী দখলদার সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ২/৩ সপ্তাহ ধরে যে পরিমাণ নির্যাতন সরকার চালিয়েছে তা অবর্ণনীয়। এ আন্দোলন সফল করতে ছাত্রছাত্রীরা যে অকুতোভয় ভূমিকা রেখেছে, যেভাবে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে, সাধারণ মানুষ যেভাবে আন্দোলনে শরিক হয়েছে, জীবন দিয়েছে তা অভাবনীয়। তিনি এই আন্দোলনের বীরশ্রেষ্ঠ আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ সব শহীদকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, আমি গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিএনপি মহাসচিবসহ অনেক রাজনৈতিক নেতারা খোঁজখবর নিয়েছেন, সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মঞ্জু বলেন, আমাদের গর্বের সেনাবাহিনী শেষ পর্যন্ত দেশবাসীর পক্ষ নিয়েছেন, স্বৈরাচারের দোসর হননি।
পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ করে এবি পার্টির সদস্য সচিব বলেন, জনগণের প্রথম আস্থার জায়গা পুলিশ। যারা নানা অপকর্ম করে এই আস্থা ভঙ্গ করেছেন তারা আত্মসমর্পণ করেন, যারা সৎ কর্মকর্তা ছিলেন আপনারা এই পুলিশ বাহিনীকে পুনর্গঠন করুন যেন জনগণের আস্থা আবার পুলিশের প্রতি ফিরে আসে।
মঞ্জু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনুসের প্রতি পূর্ণ সংহতি জানিয়ে বলেন, এই সরকার গঠিত হলে এবি পার্টি আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের গঠনমূলক সব কাজে সার্বিক সহায়তা করবে। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকার অনুরোধ জানান।
ভারতের বিবেকবান জনগণকে এই ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ভারত আমাদের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ভারতের সরকার আমাদের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না করে একটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক সম্পর্কে জড়িয়েছে, এমনকি ভারত একজন খুনি শাসককে আশ্রয় দিয়েছে, এটা তাদের ভুল নীতি। আমরা আশা করব ভারত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলবে।
মঞ্জু বলেন, নতুন যে সরকার গঠিত হবে আমরা আশা করব তারা দেশের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে রিফর্ম করবে। যেন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের আস্থার জায়গায় পরিণত হয়।
তিনি দেশের জনগণসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা শান্ত থাকুন। আমরা আর একটিও মৃত্যু দেখতে চাই না। বিজয় অর্জনের পর আমাদের তা রক্ষা করতে হবে। বিজয়কে ধ্বংস করে এমন কোনো কাজ আপনারা করবেন না।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এবি পার্টির সদস্য সচিব বলেন, আপনাদের নেত্রী পালিয়েছে কিন্তু আমরা দেশে আছি। যারা অপরাধ করেননি তারা সমস্যা মনে করলে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে আমাদের জানান। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার, অ্যাডভোকেট গোলাম ফারুক, বিএম নাজমুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভূইয়া, আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এবিএম খালিদ হাসান ও আমিনুল ইসলাম এফসিএ ও মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন।