টানা কয়েক দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয় থেকে মুক্তি পেয়েছে বৈষম্যবিরোধী অন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। মুক্তির পর থেকেই শুরু হয় নানা আলোচনা। বেরিয়ে আসে নানা তথ্য।
ডিবি থেকে বেরিয়ে আসার পর একটি দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে কথা হয় সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভালো নয়। বাসায় ফিরেই স্যালাইন নিয়েছি। একটু সুস্থ হলে ছয়জন মিলে বসে সব কথা ক্লিয়ার করে বলব।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ডিবি থেকে মিডিয়ায় কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। তারা তাদের মতো করে বলেছে। কিন্তু আমরা তাদের কথা শুনব না। আমরা আমাদের মতো করে সবই বলব। এক্ষেত্রে আমাদের একটু সময় দেন। আগে আমাদের সুস্থতা দরকার।
নাহিদ ইসলামের বাবা বদরুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। কথা বলার মতো পরিস্থিতি হলে সে সবই জানাবে।
ডিবি থেকে বের মুক্তি পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তিনি এ স্ট্যাটাস দেন।
তিনি বলেন, রাজপথের আন্দোলনের সিদ্ধান্ত রাজপথ থেকেই আসবে। ডিবি অফিস থেকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আদায়কৃত ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে রাজপথে নেমে আসা ছাত্র-জনতাকে সালাম জানাই।
তিনি আরও বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার, দায়ীদের পদত্যাগ ও নির্বিচারে গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে কর্মসূচি চলমান থাকবে। গত ১৯ জুলাই থেকে অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করছি। আপোষহীনতার জন্য যে কোন মূল্য দিতে প্রস্তুত আছি।
এদিকে ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তির পর আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম সাংবাদিকদের উদ্দেশে একটি বার্তা দেন। তবে পরে সে বার্তাটি মুছে ফেলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এ সমন্বয়ক। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যার পর হোয়াটসঅ্যাপে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বার্তাটি দিয়েছিলেন তিনি।
তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি ডিলিট করে দেন। ওই বার্তায় সারজিস আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘আমাদের ছয়জন সমন্বয়কের সিদ্ধান্ত ছিল- আমরা আজকে রাতে ডিবি অফিসের দিনগুলো নিয়ে একটি প্রেস রিলিজ দেব। এরপর অনলাইন মিটিংয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। আমরা এখনো কোনো কর্মসূচি দেইনি। ইভেন (এমনকি) প্রেস রিলিজও দেইনি।’
এর আগে দুই সমন্বয়ক সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তবে স্ট্যাটাস দেওয়ার কিছুক্ষণ পর দুজনেরই আইডি উধাও হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহর আইডি খুঁজেও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজত থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ডিবির গাড়িতে করে সবাইকে বাসায় দিয়ে আসা হয়।
প্রসঙ্গত, ডিবিতে থাকা ছয় সমন্বয়কদের মধ্যে প্রথমে তিনজনকে গত শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিকেলে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে তুলে নেওয়া হয়। তারা হলেন- নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের।
এর পরের দিন সন্ধ্যায় সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে নিয়ে আসে ডিবি। এরপর রোববার ভোরে মিরপুরের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তুলে আনা হয় নুসরাত তাবাসসুমকে। এরপর থেকেই এসব সমন্বয়ক ডিবি কার্যালয়ে ছিলেন। ডিবির দাবি, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই তাদের নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।