ক্যানসারে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু ক্যানসারেই হয়। এমন প্রচলিত ব্যাখ্যাকে পাল্টে দিয়েছেন একদল গবেষক। তারা দাবি করেছেন, ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যান না রোগী। বেশিরভাগ ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয় ‘ক্যাচেক্সিয়া’ নামের আরেকটি রোগে। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে অধ্যাপক বো লি নামের এক গবেষকের নেতৃত্বে চালানো গবেষণায়। খবর এনডিটিভির।
গবেষকরা দেখেছেন, ক্যানসার আক্রান্তের টিউমার যখন শরীরে ইন্টারলিউকিন-৬ (আইএল-৬) নামের একটি রোগ প্রতিরোধী কোষের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, তখন এটির কারণে ভয়াবহভাবে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের স্নায়ূতন্ত্রের ক্ষয়জনিত এই ক্যাচেক্সিয়া’ রোগের কারণে ৫০ থেকে ৮০ শতাংশ ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয় হয়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোল্ড স্প্রিং হার্বার ল্যাবরেটরি (সিএসএইচএল) এর অধ্যাপক বো লি বলেছেন, ‘এটি খুবই মারাত্মক একটি উপসর্গ। বেশিরভাগ ক্যানসার আক্রান্তের মৃত্যু ক্যানসারের বদলে ক্যাচেক্সিয়ায় হয়। এই পর্যায় থেকে ফেরার কোনো উপায় নেই। মূলত এখন পর্যন্ত এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই।’
বিজ্ঞান ও প্রকৃতিবিষয়ক প্রভাবশালী সাময়িকী ন্যাচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এই গবেষক এসব কথা বলেন।এই অধ্যাপক ও তার দল একটি ইঁদুরের উপর গবেষণা চালিয়েছেন। এতে তারা দেখেছেন মস্তিষ্কের ‘এরিয়া পোসট্রেমা’ নামের একটি নিউরনে আইএল-৬ নামের রোগ প্রতিরোধী অণু প্রবেশে বাধা প্রধান করলে ইদুরের মধ্যে ক্যাচেক্সিয়া হয় না। ভবিষ্যতে এসব নিউরন লক্ষ্য করে ওষুধ প্রয়োগ করে ক্যানসার ক্যাচেক্সিয়াকে একটি চিকিৎসাযোগ্য রোগে পরিণত করা যাবে বলে জানিয়েছেন এই অধ্যাপক।
সুস্থ রোগীদের মধ্যে আইএল-৬ একটি প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধী হিসেবে কাজ করে। এই অণু পুরো শরীরে প্রবাহিত হয়। যখন কোনো হুমকির বিরুদ্ধে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় হয় তখন এটির বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করতে মস্তিষ্ককে সতর্ক করে দেয় আইএল-৬।
গবেষকদের তথ্য অনুযায়ী, প্রচুর পরিমাণে আইএল-৬ উৎপাদিত হওয়ায় ক্যানসার এই প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। যেটি শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। যার মধ্যে অন্যতম হলো মানুষ ও প্রাণী খাবার খাওয়া ছেড়ে দেবে। অপরটি হলো ক্ষয়জনিত ক্যাচেক্সিয়ায় আক্রান্ত হওয়া।’