Friday, November 22, 2024

ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না, ২ কর্মকর্তার ভিডিও ফাঁস

আরও পড়ুন

ফরিদপুরে ভূমি অফিসে ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না, ২ কর্মকর্তার ভিডিও ফাঁস
সারাদেশ | 3RD JUNE, 2024 9:47 PM

তরিকুল ইসলাম হিমেল (ফরিদপুর করেসপনডেন্ট):

টাকা ছাড়া কোনো ফাইলই নড়ে না ফরিদপুরের ইউনিয়ন ও পৌর ভূমি অফিসগুলোতে। টাকা না দিলে ফাইল পড়ে থাকে মাসের পর মাস। ১১শ’ টাকার মিউটিশন করতে এসব অফিসে সর্বনিম্ন দিতে হয় ৬ হাজার টাকা। সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে দুই কর্মকর্তার ঘুষ নেয়ার ভিডিও এই প্রতিবেদকের হাতে আসার পর অনুসন্ধানে নামে প্রতিবেদক।

দুটি ভিডিওর মধ্যে একটি ভিডিও ফরিদপুর নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার অশোক করের। এই ভিডিওটি গত ১৭ এপ্রিলের। ভিডিওতে দেখা যায়, প্রথমে সেবাগ্রহীতা সুমন মুন্সীর কাছ থেকে কাগজপত্র বুঝে নিচ্ছেন অশোক কর। পরে দর কষাকষি করছেন। এরপর সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে গুনেগুনে ৬ হাজার টাকা নিচ্ছেন। টাকাটা দেয়া হয়েছিল মিউটিশনের জন্য, যার সরকারি ফি ১১৫০ টাকা।

অপর ভিডিওটি ফরিদপুর পৌর ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা হেদায়েত হোসেনের। এই ভিডিওটি ২৩ সালের ডিসেম্বরের। এই ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, ফরিদপুর পৌর ভূমি অফিসের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা হেদায়েত হোসেন খালেদ নামের এক সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে গুনেগুনে ১০ হাজার টাকা নিচ্ছেন মিউটেশন বাবদ।

আরও পড়ুনঃ  পাইকগাছায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত ১৩ গ্রাম

তহসিলদারকে টাকা দেয়া সেবা গ্রহীতা সুমন মুন্সী বলেন, ভূমি অফিসে টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না। তিনি এর আগেও আবেদন করেছিলেন, তখন টাকা দেননি, তাই কাজও হয়নি। এবার তিনি ভূমি অফিসের তহসিলদারকে মিউটেশনের জন্য ৬ হাজার টাকা দেন। ঝামেলা থাকলে এই রেট আরও বাড়ে।

তিনি আরও বলেন, আমি অনেক অনুরোধ করেছিলাম, কিছু টাকা কম নেয়ার জন্য। কোনোভাবেই টাকার অঙ্ক কমানো যায়নি। কাজী মানিক নামের আরেক সেবাগ্রহীতা জানান, তার কাছ থেকেও মিউটেশন বাবদ তহসিলদার অশোক কর ৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। এখন আরও ৫ হাজার টাকা দাবি করছেন।

আরেক সেবাগ্রহীতা খালেদ জানান, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা শুনলে মনে হবে, ঘুষ নেয়া তাদের অধিকার। কেন টাকা দিলেন জানতে চাইলে খালেদ বলেন, আমাকে প্রায় ৩ মাস ঘুরিয়েছে। পরে বলেছে, কিছু খরচ দেন। এরপর তাদের সাথে দর কষাকষি করে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। অথচ টাকা নিয়ে এখনও আমার কাজ করে দেয়নি। এমনকি টাকাও ফেরত দেয়নি।

আরও পড়ুনঃ  বোরকা পরে বালিকা মাদরাসায় যুবক, ধরা পড়ে খেলেন গণপিটুনি

ভিডিও হাতে আসার পর ইউনিয়ন ও পৌর ভূমি অফিসের সেবা নিয়ে অনুসন্ধানে নামে এই প্রতিবেদক। প্রায় সবগুলো ভূমি অফিসের একই চিত্র উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। মিউটিশনের সরকারি ফি ১১৫০ টাকার স্থলে তারা অলিখিতভাবে রেট করে রেখেছেন সর্বনিম্ব ৬ হাজার টাকা।

সরেজমিনে চরযশোরদী ভূমি অফিসে উপস্থিত হলে সাংবাদিকদের কাছে পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। তারা জানান, তহসিলদার অশোক কর অফিসে আসেন বেলা ১২টায়। তার কাছে কোনো কাজে আসলে মাসের পর মাস ঘুরান। টাকা না দিলে কাজ করে দেন না।

অভিযুক্ত অশোক কর চরযশোরদী ভূমি অফিসে যোগদান করেছেন প্রায় ৮ মাস আগে। এর আগে, তিনি ছিলেন একই উপজেলার তালমা ভূমি অফিসে। সেখানেও তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তাকে বদলি করে এখানে পদায়ন করা হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান নিয়মে অনলাইনে আবেদনের ২৮ দিনের মধ্যে মিউটিশনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে ভূমি অফিসকে। ২৮ দিন পার হলে ওই আবেদন অকার্যকর হবে এবং ওই সেবাগ্রহীতাকে নতুন করে আবার আবেদন করতে হবে। এই সুযোগ নিয়ে ইউনিয়ন ও পৌর ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেবাগ্রহীতাদের আবেদন মাসের পর মাস ফেলে রাখছেন। এক পর্যায়ে গিয়ে সেবাগ্রহীতারা বাধ্য হচ্ছেন ওই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টাকা দিতে।

আরও পড়ুনঃ  রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন সমন্বয়করা

অভিযুক্ত তহসিলদার অশোক কর ঘুষ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। অপর অভিযুক্ত হেদায়েত হোসেন প্রথমে জানান, অফিসে নগদ টাকা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই। পরে অফিসের চেয়ারে বসে টাকা গুনে নেয়ার ভিডিও তাকে দেখালে তিনি জানান, ওটা দাখিলার টাকা। দাখিলার জন্য ১০ হাজার কেন? এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর তিনি দেননি।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, প্রত্যেক অফিসেই কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকে। আমরা তাদের লাগাম টানার চেষ্টা করছি। যাদের কথা বললেন, কোনো রকম প্রমাণ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমি জনগণকে অনুরোধ করব– কোনো অসাধু কর্মচারী কিংবা দালালকে টাকা না দিয়ে নিচে আমার অফিসে এসে আবেদন করতে। আবেদন করতে না পারলে হেল্প ডেস্কের লোক সহায়তা করবে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ