নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনছে সরকার। নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে আগামী ২০২৬ সাল থেকে। আর ২০২৭ সাল থেকে শুরু হবে একাদশ শ্রেণিতে। নতুন পদ্ধতিতে কোনো শিক্ষার্থী যদি এসএসসিতে এক বা দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হয়, সে চাইলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবে। তবে পরের দুই বছরের মধ্যে তাকে পাবলিক মূল্যায়নে অংশ নিয়ে বিষয়গুলোতে কৃতকার্য হতে হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তৈরি করা ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২-এর মূল্যায়ন কৌশল ও বাস্তবায়ন নির্দেশনা’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার (২৮ মে) কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিভিশন কোর কমিটিতে পাস হয়েছে প্রতিবেদনটি। তবে এনসিটিবি হয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় এটি চূড়ান্ত হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, একাদশে ভর্তি হয়েও মান উন্নয়নের জন্য এক বা একাধিক অথবা সব বিষয়ে পুনরায় পাবলিক মূল্যায়নে (এসএসসি) অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে। অনন্য, অর্জনমুখী, অগ্রগামী, সক্রিয়, অনুসন্ধানী, বিকাশমান ও প্রারম্ভিক– শীর্ষক ৭টি সূচকের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হবে শিক্ষার্থীর রিপোর্ট কার্ড। এতে সব বিষয়ে পারদর্শিতা বা সর্বোচ্চ সূচক অনন্য, আর সর্বনিম্ন সূচক হলো প্রারম্ভিক।
কারিকুলাম পর্যালোচনা কোর কমিটির একজন সদস্য গণমাধ্যমকে জানান, বর্তমানে একজন শিক্ষার্থী এসএসসিতে এক বা দুই বিষয়ে ফেল করলে তার শুধু ওই দুই বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় না। নতুন কারিকুলামে কলেজে ভর্তি হওয়ার হওয়ার সুযোগের বিধান রাখা হয়েছে।
একসঙ্গে সে একাদশে ক্লাস চালাবে এবং অনুত্তীর্ণ বিষয়ের পরীক্ষা দেবে। শুধু তাই নয়, সে পরের দুই বছর এ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া একাদশে ভর্তি হয়েও মানোন্নয়নের জন্য এক বা একাধিক বা সব বিষয়ে পুনরায় পাবলিক মূল্যায়নে (এসএসসি) অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, যেকোনো কারণে একজন শিক্ষার্থী এক বা দুই বিষয়ে খারাপ ফল করতেই পারে। সেজন্য তার পরবর্তী স্তর আটকে থাকতে পারে না। কোর কমিটির এ সিদ্ধান্ত খুবই ভালো উদ্যোগ। এতে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাবে না।
এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, বর্তমানে এসএসসিতে এক বা দুই বিষয়ে ফেল করলে শুধু সেই বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকলেও কলেজে ভর্তি হতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীর জীবন থেকে এক বা একাধিক বছর চলে যায়।
নতুন কারিকুলামে কেউ এক বা দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলে সে একাদশে ভর্তি হয়ে ওই সব বিষয়ে ফের পরীক্ষা দেবে। এতে তার দুটি কাজ একসঙ্গে চলবে। কোর কমিটিতে এসব প্রস্তাব পাস হয়েছে। এখন এনসিসিসি সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সেখানে চূড়ান্ত হলে সবাইকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
২০২৩ সালে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। আর চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে শুধু দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হলেও এর নাম অপরিবর্তিত থাকবে।