প্রায় ২০০ বছরের পুরনো গফুর শাহ মসজিদ। কিন্তু মসজিদটি মানুষের কাছে পরিচিত গায়েবি মসজিদ হিসেবে। চার হাজার ফিট জায়গাজুড়ে ও ৪০টি পিলারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। পুরনো এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠার পিছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস।
জনশ্রুতি আছে, আবদুল গফুর শাহ নামের এক কৃষক কৃষি কাজ ও গরুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। প্রতিদিন গফুর শাহ তার গরুগুলোকে নিয়ে পাহাড়ের ছেড়ে দিতেন। পাহাড় ঘুরে ঘাস খেয়ে গরুগুলো আবারও ফিরে আসত। কিন্তু একদিন ঘাস খেতে গিয়ে তার একটি গাভির বাছুর আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও বাছুরটি আর পাওয়া যাচ্ছিল না। হঠাৎ কয়েক দিন পর গভীর জঙ্গল থেকে ভেসে আসে হারানো বাছুরের ডাক। গরুর বাছুরের ডাক শুনে ভিতরে গিয়ে তিনি বিস্মিত হন এবং দেখতে পান জঙ্গলেও একটি নামাজ পড়ার স্থান রয়েছে। সেখানে ঘাসের মধ্যে কপালের ও হাঁটুর জায়গার ছাপ রয়েছে। ছিল আরও নানা চিহ্ন। যা দেখে তিনি মনে মনে ধারণা করেন যে, এখানে কোন বুজুর্গ ব্যক্তি নিয়মিত নামাজ পড়েন। পরে তিনি ওই স্থানটিকে বাঁশের বেড়া দিয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করলেন। কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় হলো এই মসজিদের মধ্যে ফজর ও মাগরিবের সময় গায়েবিভাবে ভেসে আসতো আজানের সুমধুর সুর।
প্রথম প্রথম এলাকাবাসী যেতে ভয় পেলেও পরে গ্রামবাসীরা মিলে বেড়ার পরিবর্তে এটিকে মাটির মসজিদ তৈরি করলেন। ততদিনে কৃষক গফুর শাহ নিজেও হয়ে উঠলেন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। এক সময় তিনি উধাও হয়ে গেলেন, অনেক খোঁজাখুঁজি করে তার আর দেখা মিলেনি। দূর-দূরান্ত থেকে এ মসজিদে ছুটে আসতে থাকেন ধর্মভীরু বহু নর-নারী। মসজিদটি পরিচিত হয়ে গেল গফুর শাহ গায়েবি মসজিদ নামে। পরে এখানে দূর দূরান্ত থেকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ মনের বাসনা নিয়ে আসতেন এবং তা পূরণ হতো। এমন বিশ্বাস তৈরি হলো সবার মাঝে।
মসজিদের ইমাম মাওলানা হোসাইন বলেন, আমি জন্মের পর থেকে রাতকানা রোগে ভুগছিলাম। আমার বাবা এখানে একটি ছাগলের কলিজা নিয়ে আমাকে খাওয়ালে আমি সুস্থ হয়ে যায়। পরে মাদ্রাসা শিক্ষা জীবন শেষ করে এই মসজিদের খেদমত হিসেবে ২৭ বছর ধরে সেবা দিচ্ছি। মসজিদে খেদমত জীবনে শুরুতে ফজরের ওয়াক্তে কে বা কারা আমাকে দরজা ধাক্কা দিয়ে ডেকে দিতেন এবং বলতেন আযানের সময় হয়েছে উঠেন উঠেন।
তিনি আরও বলেন, আগের ইমাম স্বপ্নযোগে দেখেছেন মসজিদের পশ্চিম কোনে গফুর শাহ শায়িত আছেন। প্রতিদিন এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের মানুষ এসে জিয়ারত করেন। অনেকে মান্নত করে ছাগলও দিয়ে যান। তবে জুমার দিন হাজার হাজার মুসল্লি বিভিন্ন জায়গা থেকে নামাজ পড়তে আসে এবং বিভিন্ন ধর্মের মানুষ জিয়ারত করতে ভিড় জামায়।
মসজিদের দায়িত্বে থাকা সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, এক সময় এখানে ফজর ও মাগরিবের ওয়াক্তে গায়েবিভাবে আজানের সুমধুর সুর ভেসে আসতো। মানুষ একসময় এখানে আসতে ভয় পেত। এখন সারারাত মানুষ এখানে ইবাদত করে।
বারৈয়ারঢালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেহানউদ্দিন বলেন, এলাকার মুরুব্বীদের কাছে শুনেছি এখানে গফুর শাহ নামের এক ওলী ছিলেন। ওই অলির নামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন ছাড়াও জুমার দিনে এখানে অজস্র মানুষের সমাগম হয়। বিভিন্ন ধরনের মানুষ এখানে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসেন এবং মান্নত করেন।