রাজধানীর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ কর্মকর্তাকে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শনিবার (২৩ মার্চ) রাতে মারধরের এই ঘটনার ভুক্তভোগী পুলিশ পরিদর্শক মো. সেলিম আকতার বাদী হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা রতনসহ সাব্বির, শান্ত, ইমরান ও রাজিবের নাম উল্লেখ করে মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলা নম্বর হলো – ৩০। এর আগে গতকাল শনিবার দৈনিক কালবেলায় ‘পুলিশ কর্মকর্তাকে বেধড়ক পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
সংবাদে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হয়।
জানা গেছে, ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য সেলিম আকতার ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অন্তর্গত ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের ইকোনমিক ক্রাইম অ্যান্ড হিউম্যান ট্রাফিকিং টিমের সদস্য।
মামলার এজহারে সেলিম আকতার বলেন, গত ২০ মার্চ এলিফ্যান্ট রোডের দিক থেকে মটর সাইকেল চালিয়ে শাহবাগের দিকে যাওয়ার সময় আজিজ সুপার মার্কেট এর সামনে দাঁড়ানো পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেটকার ও রিক্সার আড়াল থেকে তিনজন লোক রাস্তার মাঝখানে চলে এলে আমার চলন্ত মটর সাইকেল এর বাম পার্শ্বের লুকিং গ্লাসের সাথে একজনের হাতে সামান্য ছোঁয়া লাগে। এতেই তারা আমার মটর সাইকেলের গতিরোধ করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ এলোপাথাড়ি কিল- ঘুষি ও লাথি মারা শুরু করে। আমি তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করি যে, আমি ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের গায়ে লাগাইনি। আমি মটর সাইকেলে বসে থাকাবস্থায় তারা আমাকে ধাক্কা এবং লাথি দিয়ে পাকা রাস্তার উপর ফেলে দেয়। আমি উঠার চেষ্টা করলে তারা আবারো লাথি মেরে আমাকে রাস্তার উপর ফেলে দেয়। পরবর্তীতে আরো ৩/৪ জন তাদের সাথে যুক্ত হয়ে আমাকে মারতে থাকে। তাদেরকে আমি পুলিশ পরিদর্শক পরিচয় দিলে তারা বলে, ‘রাখ তোর পুলিশ, এখান থেকে শত শত পুলিশ সৃষ্টি হয়, তুই আমাদেরকে পুলিশ পরিচয় দিচ্ছিস, ডাক তোর কোন পুলিশ বাবা আছে, তোকে এখান থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে, বাংলাদেশের পুলিশ আমরা গোনায় ধরি না।’
এজহারে ভুক্তভোগী আরও বলেন, তারা আমাকে জোরপূর্বক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে নিয়ে হত্যা করে গুম করার হুমকি দিয়ে পিছন থেকে হাত দিয়ে গলায় চেপে ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকলে উপস্থিত লোকজনের হস্তক্ষেপে তারা আমাকে ফেলে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে কাঁটাবনের দিকে চলে যায়। আক্রমণকারীদের পরস্পরকে রতন, সাব্বির, শান্ত, ইমরান, রাজিব নাম ধরে সম্বোধন করতে আমি শুনতে পেয়েছি।
এর আগে গত শনিবার (২৩ মার্চ) ঘটনার কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ‘পুলিশ কর্মকর্তাকে বেধড়ক পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কালবেলা। যার প্রেক্ষিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রশাসন।
কালবেলার হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাস্তার এক পাশে পাশাপাশি দুটি রিকশা রাখা। তিনজন যুবক রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়ে আছেন। সবার কাঁধে ব্যাগ। এ সময় পাশ দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। মোটরসাইকেলের সামনের অংশের সঙ্গে ওই যুবকদের হালকা ধাক্কা লাগে। ধাক্কা লাগার পরেও তারা দাঁড়িয়েই ছিলেন। এরপর ওই যুবকদের সঙ্গে ওই পুলিশ কর্মকর্তার কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে, ওই তিন যুবক মোটরসাইকেল থেকে পুলিশ কর্মকর্তাকে নামিয়ে মারধর শুরু করেন। মারধরের এক পর্যায়ে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। এরপর শুরু হয় লাথি, কিল ও ঘুসি। একপর্যায়ে মারতে মারতে রাস্তা থেকে মার্কেটের সামনে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, চার যুবক মিলে ফের মারতে মারতে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে মার্কেটের সামনে দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন ওই পুলিশ কর্মকর্তার হাতে একটি হেলমেট ছিল। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা রতন সরকার ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে মার্কেটের গেটের একটি দেয়ালের সঙ্গে মাথায় বাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ কর্মকর্তা তখন হাত দিয়ে প্রাণপণ মাথা বাঁচানোর চেষ্টা করেন। মাথা বাঁচাতে তিনি হাতের হেলমেট দেয়ালের সঙ্গে মিশিয়ে ধরেন। এভাবেই মারতে মারতে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
মারধর করা যুবকদের মধ্যে রতন নামে একজনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় কালবেলা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
তার ফেসবুকের তথ্যমতে, তিনি ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহসম্পাদক।
তার তথ্যমতে, বাকিদের নাম শান্ত, রাজীব ও ইমরান। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী এবং রতন সরকারের বন্ধু ও ছোট ভাই।
মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান কালবেলাকে বলেন, এ ঘটনায় গতকাল (২৩ মার্চ) একটি মামলা হয়েছে। এর কাজ চলমান।