Friday, November 22, 2024

২৭ বছর পর বাড়ি খুঁজে পেলেন শাহীদা, দেখা পেলেন না বাবা-মায়ের

আরও পড়ুন

জামালপুর করেসপনডেন্ট:

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার দিকপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির মেয়ে শাহীদা আক্তার। অভাব অনটনের সংসারে ২৭ বছর আগে ১৯৯৭ সালে ঢাকার উত্তরা এলাকায় ৭ বছর বয়সে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি। এরপর অনেক খুঁজেও তাকে পায়নি পরিবার। ২৭ বছর পর সেই শাহীদা বাড়িতে ফিরলেও তার বাবা-মা আর বেঁচে নাই। ৪ বছর আগে বাবা এবং ১ বছর আগে মা মারা গেছেন।

গতকাল রোববার (১৪ এপ্রিল) স্বামী ও ৪ বছরের মেয়ে সন্তানকে নিয়ে বকশীগঞ্জের নিজ বাড়িতে আসেন শাহীদা আক্তার। কিন্তু বাবা-মা কেউ না থাকায় বড় বোন খালেদা বেগমের বাড়ি ইসলামপুরের গোয়ালের চরে যান।
সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, বড় বোন খালেদা বেগম ও শাহীদা আক্তার একে অপরকে দেখে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরে আছেন। সবসময় কাছাকাছি থাকছে দুই বোন। যেন আদরের কমতি নেই। এ সময় আবেগঘন একটি মুহূর্তের সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুনঃ  গতবারের তুলনায় অর্ধেকে নেমেছে তরমুজের বিক্রি

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির অভাবের সংসার ছিল। গ্রামে তেমন কোনো কাজকর্ম ছিল না। বাধ্য হয়ে ১৯৯০ সালে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় উত্তরায় চলে যান তারা। সেখানে ইব্রাহিম খলিল রিকশা চালাতেন। ঢাকায় যাওয়ার কয়েক বছর পর গ্যাস না থাকায় ছোট্ট শাহীদা লাকড়ি কুড়াতে যান। সেখান থেকে তিনি নিখোঁজ হন। তার বাবা-মা তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু তার আর কোনো সন্ধান মেলেনি। এরপর থেকে শাহীদা নিখোঁজ ছিলেন। এক পর্যায়ে শাহীদার ঠাঁই হয় কুমিল্লার এক পরিবারে। সেখানে এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন তিনি। তারাই তাকে গাজীপুরে সেলিম মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেন। এখন তার একটি মেয়েও আছে।

আরও পড়ুনঃ  ভোট কারচুপির তদন্ত: সাবেক ডিসি-এসপি-ইউএনওদের ঘুম হারাম

শাহীদা আক্তার বলেন, আমাকে যারা নিয়ে গেছিল, আমি তাদের কাউকেই চিনি না। আমাকে প্রথমে কুমিল্লায় নিয়ে গিয়ে একটি বদ্ধ বাড়িতে রাখে। আমি প্রায় ৫ বছর সূর্যের আলো দেখিনি। সেখান থেকে ধীরে ধীরে আমি পালিয়ে আসি। এসে আরেকটি বাড়িতে কাজ শুরু করি, তারা অনেক ভালো, আমাকে বিয়েও দিয়েছে। আমি জীবনেও কল্পনা করিনি নিজের গ্রামে ফিরতে পারবো। আমার ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে পারবো। প্রায় সময় বাবা-মা ও পরিবারের কথা মনে পড়তো। কিন্তু ছোটবেলার তেমন কিছুই মনে পড়তো না। সম্প্রতি আমার মেয়ে নানা-নানির কথা জানতে চাইলো। মেয়ের নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদে হঠাৎ বকশীগঞ্জের দিকপাড়া নামটি মনে পড়ে। তখন থেকে বকশীগঞ্জের দিকপাড়া খুঁজতে থাকি। বাবা-মাকে দেখার জন্যই খুঁজতে খুঁজতে এই গ্রামে চলে আসি। নিজের পরিবার ও বাড়ি ঠিকই খুঁজে পেলাম। কিন্তু আমার মনে আশা পূরণ হলো না। কারণ আমার বাবা-মা মারা গেছেন। বোন ও ভাইসহ পরিবারের অন্যান্য সবাইকে পেলাম ঠিকই। কিন্তু বাবা-মাকে পেলাম না।

আরও পড়ুনঃ  ৪৯ বছর ইমামতি করে পেলেন রাজকীয় বিদায়

তার বড় বোন খালেদা বেগম বলেন, শাহীদার সন্ধান মিলবে তা কোনোদিনও চিন্তা করিনি। এতগুলো বছর পর বোনকে পেয়ে ঈদ আনন্দ আরও বেড়েছে।

দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর পর শাহীদার ফিরে আসার খবরে তাকে একপলক দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন গ্রামবাসী। তাদের প্রত্যাশা, বোনদের মধ্যে সম্পর্ক যেন অটুট থাকে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ